RAR কাব্যের উপেক্ষিতা আমি তাহদের দলে নই। সেক্সপিয়র বলিয়া গেছেন-গোলাপকে যে-কোনো নাম দেওয়া যাক তাহার মাধুর্য্যের তারতম্য হয় না। গোলাপ সম্বন্ধে হয়ত তাহ খাটিতেও পারে, কারণ গোলাপের মাধুর্য্য সঙ্কীর্ণসীমাবদ্ধ। তাহা কেবল গুটিকতক সুস্পষ্ট প্রত্যক্ষগম্য গুণের উপর নির্ভর করে। কিন্তু মানুষের মাধুর্য্য এমন সর্বাংশে সুগোচর নহে, তাহার মধ্যে অনেকগুলি সুক্ষ্ম সুকুমার সমাবেশে অনির্বচনীয়তার উদ্রেক করে। তাহাকে আমরা কেবল ইন্দ্রিয় দ্বারা পাই না, কল্পনা দ্বারা সৃষ্টি করি। নাম সেই সৃষ্টিকার্য্যের সহায়তা করে। একবার মনে করিয়া দেখিলেই হয় দ্রৌপদীর নাম যদি উর্ম্মিলা হইত। তবে সেই পঞ্চবীরপতিগর্বিত ক্ষত্রনারীর দীপ্ত তেজ এই তরুণ কোমল নামটির দ্বারা পদে পদে খণ্ডিত হইত। অতএব এই নামটির জন্য বাল্মীকির নিকট কৃতজ্ঞ আছি। কবিগুরু ইহার প্রতি অনেক অবিচার করিয়াছেন, কিন্তু দৈবক্রমে ইহার নাম যে মাণ্ডবী অথবা শ্রুতকীর্ত্তি রাখেন নাই সে একটা বিশেষ সৌভাগ্য। মাণ্ডবী ও শ্রুতকীর্ত্তি সম্বন্ধে আমরা কিছু জানি না, জানিবার কৌতুহলও রাখি না? উর্ম্মিলাকে কেবল আমরা দেখিলাম বধূবেশে, বিদেহনগরীর বিবাহসভায়। তারপরে যখন হইতে সে রঘুরাজকুলের সুবিপুল অন্তঃপুরের মধ্যে প্রবেশ করিল। তখন হইতে আর তাহাকে একদিনও দেখিয়াছি বলিয়া মনে হয় না। সেই তাহার বিবাহসভার বধূবেশের ছবিটিই মনে রহিয়া গেল। উর্ম্মিলা চিরবধুনিৰ্বাককুষ্ঠিতা নিঃশব্দচারিণী। ভবভূতির কাব্যেও তাহার সেই ছবিটুকুই মুহুর্তের জন্য প্রকাশিত হইয়াছিল-সীতা কেবল সমোহকৌতুকে একটিবার মাত্র তাহার উপরে তর্জনী রাখিয়া দেবারকে