পত্রলেখার প্রতি কাদম্বরীর ঈর্ষ্যার আভাসমাত্রও ছিল না। এমন কি, চন্দ্রাপীড়ের সহিত পত্রলেখার প্রীতিসম্বন্ধ বলিয়াই কাদম্বরী তাহাকে প্রিয়সখীজ্ঞানে সাদরে গ্রহণ করিল। কাদম্বরীকাব্যের মধ্যে পত্রলেখা যে অপরূপ ভূখণ্ডের মধ্যে আছে যেখানে ঈর্য্যা সংশয় সঙ্কট বেদনা কিছুই নাই, তাহা স্বর্গের ন্যায় নিষ্কণ্টক, অথচ সেখানে স্বর্গের অমৃতবিন্দু কই?
প্রেমের উচ্ছ্বসিত অমৃতপান তাহার সম্মুখেই চলিতেছে। ঘ্রাণেও কি কোনো দিনের জন্য তাহার কোনো একটা শিরার রক্ত চঞ্চল হইয়া উঠে নাই? রাজপুত্রের তপ্তযৌবনের তাপটুকুমাত্র কি তাহাকে স্পর্শ করে নাই? কবি সে প্রশ্নের উত্তরটুকুও দিতে উপেক্ষা করিয়াছেন। কাব্যসৃষ্টির মধ্যে সে এত উপেক্ষিতা।
পত্রলেখা যখন কিয়ৎকাল কাদম্বরীর সহিত একত্রবাসের পর বার্ত্তাসহ চন্দ্রাপীড়ের নিকট ফিরিয়া আসিল, যখন স্মিতহাস্যের দ্বারা দূর হইতেই চন্দ্রাপীড়ের প্রতি গ্রীতি প্রকাশ করিয়া সে নমস্কার করিল, তখন পত্রলেখা প্রকৃতিবল্লভা হইলেও কাদম্বরীর নিকট হইতে প্রসাদলব্ধ আর একটি সৌভাগ্যের ন্যায় বল্লভতরতা প্রাপ্ত হইল এবং তাহাকে অতিশয় আদর দেখাইয়া যুবরাজ আসন হইতে উত্থিত হইয়া আলিঙ্গন করিলেন।
চন্দ্রাপীড়ের এই আদর, এই আলিঙ্গনের দ্বারাই পত্রলেখা কবিকর্ত্তৃক অনাদৃত। আমরা বলি কবি অন্ধ। কাদম্বরী এবং মহাশ্বেতার দিকেই ক্রমাগত একদৃষ্টে চাহিয়া তাঁহার চক্ষু ঝলসিয়া গেছে, এই ক্ষুদ্র বন্দিনীটিকে তিনি দেখিতে পান নাই। ইহার মধ্যে যে প্রণযতৃষার্ত্ত চিরবঞ্চিত একটি নারীহৃদয় রহিয়া গেছে সে-কথা