পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরণ্য-কাণ্ড । আমাকে শতযোজন দূর সাগরে পাতিত করিয়াছেন, আমি তদবধি ভয়-বিহ্বল হইয়া রামের সেই কার্য্য অনবরত স্মরণ করতঃ চতুর্দিক রামময় দেখিতেছি। একদা আমি পুর্ব্ববৈর স্মরণ করিয়া পুনর্ব্বার মাদৃশ রাক্ষসগণে বেষ্টিত হইয়া তীক্ষশূঙ্গ মৃগরূপ ধারণ পূর্ব্বক দণ্ডকারণ্যে গমন করিয়াছিলাম। আমি ত্বরান্বিত হইয়া সীতা ও লক্ষ্মণের সহিত রামকে বিনাশ করিতে উদ্যত হইলে রাম আমার প্রতি একটা শর নিক্ষেপ করিলেন। হে রাক্ষসেম্র! আমি সেই বাণে বিদ্ধ-হৃদয় হইয়া শোণিত বমন করিতে করিতে সাগরে পতিত হইলাম। সেই অবধি আমি ভয়পীড়িতাস্তঃকরণে এই নির্ভয় স্থান আশ্রয় করিয়া কাল যাপন করিতেছি । ভোগসাধন রাজ্য, রত্ব, রমণী, রথ, প্রভৃতির নাম শ্রবণ করিলে রামের আদ্য অক্ষর ‘র’ মনে হওয়ায় নিতান্ত উীত হইয়া রামকেই চিন্তা করি, “রাম এই স্থানে আসিয়াছেন, এই শঙ্গাতে আমি বাহ কার্য্যসকল পরিত্যাগ করিয়াছি। আমি নিদ্রিত হইলেও রামকে স্বপ্ন দেখি, অমনি বীতনিদ্র হইয়া উপবেশন করি । অতএব অপনিও রামচন্দ্রের প্রতি ক্রোধ ত্যাগ করিয়া গৃহে প্রতিগমন করুন। চিরাগত রাক্ষসকুল রক্ষা করুন, রামের প্রতি আক্রোশ করিবেন না, তাহা হইলে সকলই বিনষ্ট হইবে। আমার হিস্ত|াক্য গ্রহণ করুন | রামচন্দ্র পরমাত্ম তাহাতে বিরোধ বুদ্ধি করবেন না, প্রত্যুত ভক্তিভাবে তাহাকে ভজনা করুন, তিনি পরম কারুণিক ৷” আমি মহামুনি-নারদের মুখে শুনিয়াছি যে, সত্যযুগে ব্রহ্মা বিষ্ণুর নিকট প্রার্থনা করিলে ভগবান হরি কহিলেন তোমার অভীষ্ট কি বল ? আমি তাহা সম্পাদন করিব’, ব্রহ্মা কহিলেন হে হরে । হে পুণ্ডরীকাক্ষ । আপনি মনুষ্য শরীরধারণপূর্বক দশরথের পুত্ররূপে ধরণীতে অবতীর্ণ হইয়া শীঘ্র আমাদিগের শত্রু রাবণকে বিনাশ করুন। অতএব রাম মনুষ্য নহেন, সাক্ষাৎ অব্যয় নারায়ণ-ভূভার হরণের জন্য মায়াদ্বারা মনুষ্য-দেহ পরিগ্রহ করিয়া নির্ভরুচিত্তে বনে আগমন করিয়াছেন। হে তাত! রামের সহিত বিরোধ পরিত্যাগ করিয়া সুখে গৃহে গমন কর” । রাবণ মারীচের বাক্য শ্রবণ করিয়া কহিল “রাম যদি পরমাত্মা ঈশ্বর হন ও আমাকে বিনাশ করিতে ব্রহ্মা কর্তৃক প্রাধিত হইয়া মনুষ্যরূপে স্বত্বপূর্বক এখানে সমাগত হইয় থাকেন, তবে অচিরেই আপনার সঙ্কল্প সত্য করবেন। (ty হরণ করিব ; হে বীর । রাম সহ সংগ্রামে যদি তামার মৃত্যু হয়, তবে শ্রেষ্ঠ পদ প্রাপ্ত হইব। নতুবা রামকে রণে নিহত করিয়া নির্ভয়ে জানকী লাভ করিব। অতএব হে মহাভাগ! উঠ, বিচিত্র মৃগৰূপ । ধারণ করিয়া রাম ও লক্ষ্মণকে আশ্রম হইতে দূরে লইয়া যাও ; অনস্তর পুর্ব্বকালের স্থায় মুখে অবস্থান কর । ইহার পর যদি আমার ভয়োৎপাদক কোন কথা বল, তবে এই অসিদ্ধারা এইস্থানেই নিঃসন্দেহ তোমাকে বিনাশ করিব" | মার্চ রাবণের বাক্য শ্রবণ করিয়া মনে মনে চিন্তা করিল—“যদি রামচন্দ্র আমাকে বিনাশ করেন, তবে এই ভবার্ণব হইতে মুক্ত হইব। আর যদি রাণ আমাকে বিনাশ করে, তাহা হইলে নিশ্চয় আমার নরক হইবে”। এইরূপে রাম হইতে মৃত্যুই উংকৃষ্ট স্থির করিয়াসে সত্বর গাত্রোখানপুর্ব্বক কহিল ;–“হে রাজন ! হে প্রভো ! চামি আপনার আজ্ঞা সম্পাদন করিব"; ইহা বলিয়া থৈ আরোহণপূর্বক রামশ্রমে গমন করিল। পরে মারচ এক আশ্চর্য্য মূগরূপ ধারণ করিল। ঐ মৃগের বর্ণ সুবর্ণ সদৃশ, গাত্র রৌপ্যময়বিন্দুরাজি-বিরাজিত, শৃঙ্গ রত্নময়, খুর মণিময়, নেত্র নীল রত্বরচিত, তাহার প্রভ। বিদ্যুৎ-সদৃশ, বদন অতীব সুন্দর। রামের আশ্রমের নিকট সীতার দৃষ্টিপথে মৃগরূপধারা মারীচ কখন ধাবিত হয়, কণন অবস্থান করে ; কখন বা নিকটে আসিয়া ভীত হয়, এইরূপে সীতাকে বিমোহিত করিতে লাগিল । যষ্ঠ অধ্যায় সমাপ্ত। সপ্তম অধ্যায় । অনন্তর, রাম ও রাবণের সেই সমস্ত চেষ্ট্র। জানিতে পারিস্ব নির্জনে সীতাকে কহিলেন – "জানকি! আমার কথা শুন ; রাবণ, ভিক্ষুরূপে তোমার নিকট আসিবে। তুমি কিন্তু তোমার সদৃশকৃতি ছায়া কুটীরে স্থাপনপূর্বক অগ্নিতে প্রবেশ কর; এবং আমার আজ্ঞাক্রমে তথায় এক বৎসর অদৃশু, রূপে অবস্থিতি কর। হে শুভে! রাবণ-বধের প্র পূর্ববং আমাকে প্রাপ্ত হইবে। জানকী, রাম, স্বাক্য শ্রবণ করিয়া তথায় তাহাই করিলেন ; মারা সীতা বাহিরে রক্ষা করিয়া আপনি অনলে অন্তস্থিত হইলেন, সেই সময় মায়াসীতা একটা মায়াকার মৃগ দেখিয়া হাসিতে হাসিতে রামের নিকট আমিঃ সবিনয়ে কহিলেন। হে রাম! দেখুন কেম আশ্চর্য্য রত্নবিভূষিত কনকময় মৃগ অকুতোভয়ে বিচ