পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাড়গিলে গলার পালকের দাড়ি ছলিয়ে বললেন —‘কথাটি তো বলেছ ঠিক, কিন্তু নাটবাড়ি হয়ে পর্যন্ত ঐ চুড়োটায় বাস করে আসছি সাতপুরুষ ধরে, আজ হঠাৎ চুড়ে থেকে চরে নেমে বসা কি কম কষ্টের কথা, আর ঐ হাড়গিলের চরটাও শুনেছি মানুষের। চেচে ফেলে ওখান দিয়ে বড়ো-বড়ো মালের জাহাজ চালাবে ? চক এবারে আমতা-আমতা করে বললে –‘তা হলে তো মুশকিল দেখছি, মানুষের সঙ্গে তো আমরা পেরে উঠব না, এ বিষয়ে আপনি —’ এবারে হাড়গিলে ঠোট বাজিয়ে বলে উঠলেন – মা, সে মানুষের কথা, যখন তারা আসবে তখন ভাবা যাবে। এখন একটা কথা শুধোই, এদিক দিয়ে চুয়োদের পল্টন যেতে দেখেছ কি ? হাজার-হাজার চুয়ো এই মাত্র এইদিক দিয়ে গেছে শুনে হাড়গিলে আকাশে চোখ তুলে বললে –এতদিনে বুঝি গণেশের ইদুরের দফা রফ, আজ রাতের মধ্যেই চুয়োরা নাটবাড়ি দখল করবে।’ চকা ভয় পেয়ে বললে –‘কী বলেন লড়াই বাধবে নাকি ?’ হাড়গিলে বলে উঠলেন –“বাধাবে আর কী, বিনা যুদ্ধে চুয়োবা আজ কেল্লা মেরে নেবে, রাজা গঙ্গাসাগরের দিকে রানীকে নিয়ে দৌড় দিয়েছেন। বামুন গেল ঘর তো লাঙল তুলে ধর, কেল্লায় যারা ছিল তারা মানস সরোবরের ধারে আসছে পূর্ণিমায় পন্ধিবদলের বারোয়ারীর নাচ দেখতে ছুটেছে, ঠিক ঝোপ বুঝেই চুয়োব দল কোপ দিতে চলেছে। কেল্লায় গোটাকতক অকৰ্মণ্য বুড়ে নেংটি ছাড়া আর তো কেউ নেই, এতকাল নেংটিদের সঙ্গে এই নাটবাড়িতে কাটালেম, এখন বুড়ে বয়সে আর শিং ভেঙে বাছুবের দলে যাওয়ার মতো চুয়োর দলে ভিড়তে আমার ইচ্ছে যায় না, তাই ভাবচি থাকি কি যাই ।” হাড়গিলে যে ইত্বরদের বিপদের খবরটা না দিয়ে হাসের দলে এসে র্কাছনি শুরু করেছে এটা চকার মোটে ভালো লাগল না। সে একটু এগিয়ে গিয়ে হাড়গিলেকে বললে –‘গণেশের ইঙ্কুরদের আপনি ও-খবরটা পাঠাননি এখনো ? - ৩১২