বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬

কিছু কথা


আজ বিংশ শতাব্দীর অন্তিম লগ্নে মানুষের বিজ্ঞান দুর্বার। অভাবিতপূর্ব তার উন্নতি। তবু আজ জনমনে অন্ধ-বিশ্বাস এবং অলৌকিকের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠতে চাইছে। এমনতর হওয়ার কারণটি আমাদেরই সমাজব্যবস্থার মধ্যে নিহিত। সমাজের হুজুরের দল চান না মজুরের দল জানুক তাদের প্রতিটি বঞ্চনার কারণ তাদের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। স্বর্গের দেবতা, আকাশের নক্ষত্র, পূর্বজন্মের কর্মফল ইত্যাদিকে বঞ্চনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে, বিশ্বাস উৎপাদন করতে পারলে, প্রতিবাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়ে হুজুর-মজুরের সম্পর্কটা বজায় রাখা যায়।

 ইতিহাসের অনিবার্য গতি বিশ্বাসের বিপরীতে যুক্তির অভিমুখে। তাই আমরা যুক্তিবাদীরা বাড়ছি। প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তে বেড়েই চলেছি। যুক্তিবাদ আজ আন্দোলনের রূপ নিতে চলেছে। আমরা সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন। জানি, যে সমাজব্যবস্থায় পদে পদে অনিশ্চয়তা, সে সমাজের মানুষগুলোর সাধুবাবা, গুরুজি, অলৌকিকতা ও গ্রহরত্নের প্রতি নির্ভরশীলতাও বেশি।

 যুক্তিহীন অন্ধ-বিশ্বাসগুলোকে হুজুরের দল ও তার উচ্ছিষ্টভোগীরা প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে রাখতে ও পুষ্ট করতে সচেষ্ট। তারই ফলশ্রুতিতে মানুষের মনের স্বাভাবিক যুক্তিকে গুলিয়ে দিতে গড়ে উঠেছে ভাববাদী দর্শন অর্থাৎ অধ্যাত্মবাদী চিন্তাধারা, বিশ্বাসবাদ, গুরুবাদ, ঈশ্বরবাদ ও ধর্মের নানা আচার-অনুষ্ঠান। যুক্তিবাদী চিন্তা ও চেতনাকে ঠেকিয়ে রাখতে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ধর্ম-উন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আজ তাই বোঝার সময় এসেছে, শোষিত মানুষের হাতিয়ার যুক্তিবাদী চিন্তার প্রবলতম শত্রু তথাকথিত ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ, ভাববাদী দর্শন, বিশ্বাসবাদ ইত্যাদি। তথাকথিত ধর্মের এই যুক্তি-বিরোধী চরিত্রের স্বরূপকে সঠিকভাবে সাধারণ-মানুষের কাছে তুলে ধরতে না পারলে কুসংস্কার মুক্তির, হুজুর-মজুর সম্পর্ক অবসানের কল্পনা শুধুমাত্র কল্পনাই থেকে যাবে।

 ডান-বাম নির্বিশেষে ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই সংসদীয় নির্বাচনের কথা মাথায় রাখতে হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনই ক্ষমতা দখলের একমাত্র পথ।