পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬ আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী অনুমান করিতে পারেন। তোমার ছায়া মাড়াইলে আমাকে নিরয়গামী হইতে হইবে, তোমার স্পৃষ্টজল গ্রহণ করিলে অশৌচ হইবে ইত্যাদিবৎ কুসংস্কার যদি কুসংস্কার বিশেষ হইয়াই ক্ষান্ত হইত, তাহা হইলে হয় ত তেমন ক্ষোভের কারণ হইত না । কিন্তু এই “আমি বড় তুমি ছোট” ইহার ফল কতদূর দাড়ায় ভাবিলে স্তম্ভিত হইতে হয়। মহম্মহদয় সহানুভূতি-বারিতে সিঞ্চিত না হইলে কদাপি এ জগতে কুটার বাধিয় বাস করিতে পারে না । রোগশয্যায় শায়িত হইয়া কিংবা দারিদ্র্যের সহিত সংগ্রামে নিপীড়িত হইয়া যদি মানুষ একটু করুণাৰু কটাক্ষ, একটু বন্ধুত্বের স্বশীতল ছায়া, একটু আত্মীয়তার ভাব, একটু আশার সাম্ভুনা না পায়, পক্ষান্তলে “তুই হীন" “তুই ছোট”, “তোকে আমি ছুইব না", “তোর প্রতি আমার কর্ত্তব্য কি ?”—ইত্যাদিবং কঠোর শ্লেষপূর্ণ ভাব যদি তাহার প্রতি প্রকাশ করা যায়, জানি না ভালবাসা কোথায় কোন নিভূততম প্রদেশে এ সংসার ছাড়িয়া পলাইয়া যায়। . এই ভালবাসা, এই সহানুভূতির অভাবে, যে সকল নিম্ন-শ্রেণীর লোক সমাজের প্রকৃত ভিত্তিস্বরূপ, তাহারা উচ্চশ্রেণীর প্রতি ক্রমেই বিদ্বেষ-ভাব পোষণ করিতে শিথিল ; এবং তাহাদের মধ্যে অনেকে ভ্রাতৃভাবপূর্ণ মুসলমান ধর্ম্ম পরিগ্রহ করিল। ঘোর ঘনঘটাচ্ছন্ন আকাশে ক্ষণিক-স্বর্ঘ্যের প্রকাশ স্বেরূপ মনোরম, এই জাত্যভিমানজর্জরিত অধঃপতিত বুঙ্গসমাজে মহাপ্রাণ শ্রীচৈতন্যদেবের সর্বজীবব্যাপী প্রেমের অবতারণা সেইরূপ মনোমুগ্ধকর। ‘চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠ, হরিভক্তিপরায়ণ: —এই মহাবাক্য যদি যথাসময়ে বিঘোষিত না হইত, তাহা হইলে নিম্নশেণীস্থ হিন্দুসমাজে কয়জন লোক বিদ্যমান থাকিত বলিতে পারি না। কিন্তু স্বার্থাদ্ধ ব্রাহ্মণাদি উচ্চজাতি এই মহান সাম্যভাব উপলব্ধি করিতে পারিল না, জাতিভেদের কঠিন শৃঙ্খলে পূর্বের মতই সমাজকে ব্যথিত করিতে লাগিল।