পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কলিকাতায় আসিতাম।--তাও একরকম কাদিতে কঁাদিতে। আমার পুত্র পৌত্রাদি সে গ্রামও দেখিলনা, সে গ্রাম্য সুখের আস্বাদও পাইল না। তাহদের জীবন অসম্পূর্ণ ও অদহীন হইল। সে গ্রাম্য-জীবন যাহাঁদের হইল না, বঙ্গদেশ কি জিনিস তাহারা তাহা জানিতে পারিল না। তােহাৱা যথার্থই হতভাগ্য। কৈকালা তখন জনপূর্ণ ছিল। তথায় প্রায় একশত ঘর ব্রাহ্মণ এবং প্রায় চারি শত ঘর তত্তবায় ছিল । কায়স্থ এবং অন্যান্য জাতিও অনেক ছিল । সকলেই এক রকম স্বচ্ছন্দে ছিল। কারণ ধান চাল সন্তা ছিল এবং স্বাস্থ্য-সুখে কেহ বঞ্চিত ছিল না । কৈকালায় মিহি মোটা বিস্তর বস্ত্র বয়ন হইত-সে বস্ত্রের বড় আদর ছিল, খুব নাম ছিল, খুব কাটুতি ছিল। কৈকালায় প্রকৃত ধনাঢ্য তত্তবায় ছিল। কৈকালা গ্রামে কুড়ি পঁচিশখানা পূজা হইত, কত ঘরে দোল দুর্গোৎসব হইত। কিন্তু কৈকালা আজ ম্যালেরিয়ায় প্রায় জনশূন্য-গত ৪০ বৎসরে বোধ হয় শতকরা ৭৫ জন চলিয়া গিয়াছে —গ্রামে গৃহ অতি অল্পই আছে। পথের দুই ধারে কেবল কঁাতড়া পড়িয়া রহিয়াছে। তন্তবায় দুই দশ জন মাত্র আছে—তাহারা এখনও কাপড় বুনিতেছে, হাবড়ার হাটে তাঙ্গাদের কাপড়ের আদর এখনও আছে—কিন্তু দুই দশজন বৈ নয়, তাও ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুবৎ। । কয়খানা কাপড়ই বা বুনিবে, কয়টা টাকাই বা পাইবে ? সমস্ত গ্রামে এখন একখানি মাত্র পূজা হয় (বস্তুবাড়ীতে)- তাহাতেও ব্রাহ্মণভোজনের সময় কুড়ি পাঁচিশটার অধিক ব্রাহ্মণ পাওয়া যায় না । বাগদীদুলে সব মরিয়া গিয়াছে।--তারকেশ্বর রেল রাস্তা নির্ম্মণার্থ অন্য স্থান হইতে আনীত কুলী-মজুর-কোল সঁওতাল-তাহাদের স্থান অধিকার করিয়াছে। গ্রামে জঙ্গল বাড়িয়াছে, বন্য শূকরাদি হিংস্ৰ জন্তু দেখা দিয়াছে। ম্যালেরিয়ার জন্য প্রায় চল্লিশ বৎসর সোনার কৈকালায় যাই নাই । এত দিনের পর অবসর গ্রহণ করিলাম। আজি সেই সোনার কৈকালায় বসিয়া সেই বাল্যসুখ উপভোগ করিব । কিন্তু তাহা আর হইল না। কি জানি কে শক্রতা সাধন করিল-আমার সেই সোনার কৈকালা মাটী করিয়া দিল। অথবা বিধাতাই আমাদের প্রতি বিমুখ । পঞ্চমবর্ষে যথারীতি হাতে খড়ি হইলে পর আমি পাঠশালায় প্রবেশ করি । আমাদের বাড়ীতেই পাঠশালা ছিল । উদয় নামক এক ব্যক্তি আমাদের গুরুমহাশয় ছিলেন । ( তাহার অসাক্ষাতে ) তাহাকে আমরা উদো মোশাই বলিতাম। তিনি আমাকে বড় ভালবাসিতেন । সদর বাটীতে পাঠশালা বসিত । সেখান হইতে আমাদের অন্দর বাটী কিছুদূর । মনে আছে, একদিন অপরাহ্নে বৃষ্টি হইতেছিল বলিয়া গুরুমহাশয় একটি গোলপাতায় ছাতা মাথায় দিয়া আমাকে কোলে করিয়া অন্দরবাটীতে রাখিয়া আসিয়াছিলেন। আমার বয়স যখন আট বৎসর, তখন আমার V