পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wou-9 প্রপিতামহের মৃত্যু ቆ9ፃ গেল। তার বমিতে আস্ত আস্তি লিচু উঠল। সে কথা। এই জন্য বলিতেছি যে, তাহার মৃত্যুতে এত আঘাত পাইসাছিলাম যে তদবধি আজ পর্য্যন্ত এই দীর্ঘ কাল ভাল মনে লিচু খাইতে পারি নাই। লিচু খাইতে গেলেই উন্মাদিনীর কথা মনে হয়। প্রাতে ৯টার সময় পীড়া জন্মিয় অপরাই ৩টার মধ্যে উন্মাদিনীর মৃত্যু হইল। মৃত্যুকালে তাহাকে যখন নিকটস্থ পুকুরে* নামাইল, তখন আমি গিয়া তার সম্মুখে দাড়াইলাম। মনে হইল, সে আমার দিকে চাহিয়া রহিয়াছে এবং তাহার দুই চক্ষে জলধারা পড়িতেছে। সেই চক্ষের জলধারা এই দীর্ঘ কাল ভুলিতে পারি নাই। উন্মাদিনী চলিয়া গেলে গৃহ শূন্য দেখিলাম। তৎপরে আমার তিন ভগ্নী জন্মিয়াছে, এবং তদ্ভিন্ন পরের মাকে মাসী পরের বোনকে বোন অনেক বার করিয়াছি, কিন্তু শৈশবের সেই বিমল আনন্দের স্মৃতি হৃদয় হইতে বিলুপ্ত হয় নাই। বোধ হয়। ইহার পূর্ব্ব বৎসর পূজার সময় আমার প্রপিতামহদেব স্বৰ্গারোহণ করিয়াছিলেন। তঁাহাব মৃত্যুর কয়েক দিন পূর্বে তিনি অনুভব করিতে পারিলেন যে তঁর আসন্নকাল উপস্থিত। আমি ও আমার পিতা তখন কলিকাতায় ছিলাম। তিনি আমার পিসা মহাশয়কে আমাদিগকে সংবাদ দিয়া বাড়ী লইবার জন্য ব্যস্ত করিয়া তুলিলেন। বাবা গেলেন। আমি বোধ হয়। কলিকাতাতেই থাকিলাম, কারণ তঁর মৃত্যুশয্যা আমার স্মরণ হয় না। তৎপরে মৃত্যুর দুই এক দিন পূর্বে নিজকে বাড়ীর বাহিরে চণ্ডীমণ্ডপে লইয়া রাখিবার জন্য আদেশ করিলেন। অনেক বার চীৎকার করিয়া বলা হইল যে যথাসময়ে লওয়া হইবে ; কিন্তু কিছুতেই শুনিলেন না। তঁহাকে লইয়া যাওয়া হইল। তৎপরে ইষ্টদেবতার নাম করিতে করিতে ১০৩ বৎসর বয়সে অমরধামে প্রস্থান করিলেন।

  • ১ম পৃষ্ঠার ফুটনোট দেখ।