পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ

 সামনে চেয়ে দেখলাম একটা অন্ধকার আবরণ যেন ভারতমাতার মহিমামণ্ডিত মূর্তিকে ঢেকে রেখেছে, আর আমার হাত সেদিকে আপনি চলে যাচ্ছে অবাঞ্ছিত অন্ধকার-আচ্ছাদনটাকে সরিয়ে ফেলতে। স্বাধীন দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল আমার কোনও অধিকার নেই স্বাধীন দেশে থাকতে। আমার গায়ের বাতাসও স্বাধীন দেশের বাতাসকে কলুষিত করে তুলবে। তাই মনের ভেতর থেকে আর্তস্বরে একই কথা বার বার বেরিয়ে আসছিল— স্বাধীনতা! স্বাধীনতা!

 কতক্ষণ পথ চলার পরই একটি ছোট গ্রাম পেলাম। গ্রামে গোলাবাড়ী নেই। গ্রামের একমাত্র দোকান অর্ধেকটা খোলা। যে অংশে বেনের দোকানের জিনিস বিক্রী হয় সে অংশটাই শুধু খোলা, অন্য অংশটা বন্ধ। উঁকি মেরে দেখলাম অন্য অংশটাতে গোস্ত-রুটি রয়েছে। ক্ষিদে বেশ ছিল, তাই দোকানদারকে বল্‌লাম গোস্ত-রুটি দেবার জন্যে। দোকানদার বললে, রোজার মাসে সে খাদ্য বিক্রী করবে না। আমি বললাম, তুমি না হয় উপোস করে স্বর্গে যাবে, আমি স্বর্গে যেতে চাইনে, বেঁচে থাকতে চাই। তারপর আমি মুসলমান ধর্মের লোকও নই, আমার কাছে খাদ্য বিক্রী করতে কি আপত্তি থাকতে পারে? উপরন্তু আমি ক্ষুধায় কাতর। দোকানদার বললে, যদি নিজের হাতে খাবার নিয়ে খাই তবে বিক্রী করতে তার কোন আপত্তি নেই। আমি তাতে রাজী হলাম।

 একটা ডালাতে কতকগুলো পাঠান-রুটি এক টুকরা ময়লা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। রুটিগুলি চাপাতি হতে চারগুণ বড় এবং ঢের পাতলা। রুটি হতে বেশ মিষ্টি গন্ধ বের হয়ে আসছিল। দু’খানি রুটি বের করে নিয়ে ডালাটিকে পূর্বের মত ঢেকে রেখে নিকটস্থ একটা হাঁড়িতে হাত দেওয়ামাত্র দোকানী চীৎকার করে উঠল। বললে, এটাতে যে-মাংস আছে তা তুমি খেতে পার না, দাঁড়াও আমি গরম জল নিয়ে আসছি। বুঝলাম তাতে গোমাংস ছিল। গরম জল