পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[  ]

নাই। ভারতবর্ষ ইঙ্গরেজের বিজয়লব্ধ সম্পত্তির মধ্যেও পরিগণিত নহে। ইঙ্গরেজ সামান্য বণিকের ভাবে, ক্রয়বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এদেশে উপনীত হয়েন, শেষে এতদ্দেশীয়ের সাহায্যে ভারতের রত্নসিংহাসন অধিকার করেন। ইঙ্গরেজ ভারতের আক্রমণকারী না হইলেও ভারতে সুবিস্তীর্ণ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। আয়তনে ও পরিমাণে, ইঙ্গরেজের ভারতসাম্রাজ্য মোগল সাম্রাজ্যকেও অধঃকৃত করিয়াছে। ভারতবর্ষীয়গণ যখন এই বৃহৎ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠায় ইঙ্গরেজের সহায় হয়, তখন তাহারা মনেও ভাবে নাই যে, ইঙ্গরেজের অধিকারে তাহাদিগকে সর্ব্বাংশে পরমুখপ্রেক্ষী হইতে হইবে। তাহাদের গৃহকার্য্যের উপযোগী সামান্য বস্তুটির জন্যও ইঙ্গরেজের অনুগ্রহ প্রার্থনা করিতে হইবে। ভারতবাসী তখন যাহার কল্পনাও করে নাই, যাহা তখন তাহাদের চিন্তার অগম্য ও ধারণাব অতীত ছিল, এখন কার্য্যতঃ তাহাই ঘটিয়াছে। “খ্রীষ্টের ৫৫ বৎসর পূর্বে যখন পরাক্রান্ত জুলিয়স্ সীজর কয়েক সহস্র সৈনিক পুরুষ লইয়া ব্রিটেনিয়ার উপকূলে উপনীত হয়েন, তখন তিনি ইহা দেখিয়াই নিরতিশয় দুঃখিত হইলেন যে, যাহাদের সহিত তাঁহার যুদ্ধের আয়োজন হইয়াছে, তাহারা অর্দ্ধমনুষ্য ও অর্দ্ধপশু। অপক্ব মাংস তাহাদের আহারীয়, ভূগর্ত্ত বা ভূগর্ত্তের ন্যায় মৃন্ময় কুটীর তাহাদের আবাসগৃহ, তরুশাখা তাহাদের বিনোদক্ষেত্র, তাহাদের দেহ বিবিধ বর্ণে চিত্রিত এবং তাহাদের ভাষা বিকটশব্দের দ্যায় শ্রুতিকঠোর। আর যখন বীরচূড়ামণি সেকেন্দর শাহ, জুলিয়স্‌ সীজেররও প্রায় ৩০০ বৎসর পূর্ব্বে, পারস্য হইতে পঞ্চনদের পবিত্র ভূমিতে সমাগত হয়েন, তখন তিনি ও তদীয় সহচরবর্গ ইহা দেখিয়া বিস্মিত হইলেন যে, তাঁহারা স্বদেশে থাকিয়া, যাহাদিগকে একপ্রকার অসভ্য মনে করিতেন, তাঁহারা সভ্যতায় গ্রীকদিগেরও শিক্ষাগুরু। তাঁহারা রূপে অতুল্য ও বীরত্ব, দয়া, দাক্ষিণ্য