পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

কাপাটি খেলতো, আমার দু’চোখ ফাটিয়ে জল বের করে অম্লান বদনে তারই হাত ধরে সে বেড়াতে বেরুতো, আমার জগৎ সংসার উদাস করে দিয়ে তারই পাশটি ঘেঁষেই বনভোজনে বসতো। আমি আর সহ্য করতে না পেরে মাঠের মাঝে পাথরের উপর গিয়ে বুক চুরমার করা আবেগে বিরহের কবিতা লিখতুম। এই ছেলেমানুষ প্রেমের মাঝে ছিল করুণ ও হাস্যরস দুই-ই।

 আমরা ভাবি নারী বুঝি বড় নিষ্ঠুর, এমনই করে কতই না ক্ষেত্রে সে নির্দ্দয় পাষাণের মত প্রেমার্থীর ভিক্ষা পায়ে দলে চলে যায়, অক্লেশে তারই চোখের ওপর আর একজনকে অযাচিত হয়ে চাওয়ার অধিক দিয়ে দেয়। নারীকে নিষ্ঠুর পাষাণী বলবার সময় আমরা ভুলে যাই সেও ইচ্ছা অনিচ্ছার দাস মানুষ, তারও কাউকে ভাল লাগে, কাউকে ভাল লাগে না—প্রতিদান নির্ব্বিশেষেই। আমি তাকে হাজার চাইলেও তার হৃদয়ের দিগদর্শনের কাঁটাটি যদি আমার দিকে না ঘোরে তা হলে সে করবে কি? এই একাঙ্গী প্রেমের খেলা সারা জগৎ জুড়ে চলছে, এর ট্রাজেডির বেদনায় পশু উদ্ভিদ ও জড় জগৎ অবধি থর থর আবেগে কাঁপছে। ভাল আমরা নিতান্তই অবশ হয়েই বাসি, একেবারেই হিসাব-হারা সে প্রেম, বিজ্ঞান সে মানে না, নীতি নরকের ভ্রূকুটির ধার সে ধারে না, সুরে বাঁধা বীণার মত বাজিয়ের হাত পড়লেই আত্মহারা হয়ে সে বেজে ওঠে। তার চাঁদটি উদয়াচলে পূর্ণ ষোল কলায় দেখা দিলেই তার সাগর-

৯৯