পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

নিষ্ঠায় জীবনটা কাটিয়ে দিলেন আর তাঁকে কিনা এরা দেখলো খোলা ফিটনে বিবির বেশে! সমস্ত দিন ধরে গোটা পরিবারটা মিলে সে কি জটলা, কি ঘোঁট। অন্তঃপুরে বাঁধা একঘেয়ে জীবনে এমন মুরোচক চাটনী বড় একটা সচরাচর জোটে না; যদি বা ভাগ্যক্রমে জুটেই গেল তাকে কি ছাড়া যায়, জল্পনায় কল্পনায় ঘোরাল রসাল করে তাকে জিবে উল্টে পাল্টে চেটে উপভোগ তো করে নিতেই হবে। বৈদ্যনাথে দিদিমার বাড়ীর এই কুপমণ্ডূক পরিবারটির এই রকম পরচর্চ্চার খোরাক আমি জীবনে অনেকবার জুটিয়েছি, পুরো বিপ্লবী হয়ে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে তো “বেরেটার কীর্ত্তি”ই ছিল এদের সান্ধ্য বৈঠকের ঘোট পাকাবার বিষয়। সে সব বৈঠকে তিল হ’তো তাল, স্বয়ং বড়মামা ভিতরে বারাণ্ডায় লম্বা লম্বা পা ফেলে অবিশ্রান্ত পায়চারি করতেন এবং ফোড়ং কেটে কেটে জল্পনারত মেয়েদের কাছে ‘বেরেটার’ কারসাজি রঙিয়ে ফলিয়ে উজ্জ্বল করে তুলতেন। ‘আমি দিব্যচক্ষে দেখছি ওকে একদিন ধরে আম গাছে লটকে দেবে’—বলে এমন কালো tragic রঙে বড়মামা আমার ভাবী দুরদৃষ্ট ও দুর্গতির ছবি আঁকতেন যে সবাই ভীত কণ্টকিত শরীরে মহা পুলকে তাতে সায় না দিয়ে পারতো না। বড়মামার মনটা ছিল ইংরাজ-বিদ্বেষী প্যাট্রিয়ট আর প্রাণটা ছিল তখনকার সাবধানী বাক্যবাগীশ ভীরু বাঙ্গালী। তার ওপর আড্ডা দেবার লোভ তাঁর ছিল প্রচণ্ড, ইংরেজের বিপুল শক্তি আর আমাদের ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দ্দারী

১০৯