পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

অতৃপ্ত চোখে চেয়ে চেয়ে তার রূপ-সুধা বুক ভরে পান করা—এতে আমার সকাল সন্ধ্যাগুলি রঙিয়ে কতই না উজ্জ্বল হয়ে থাকতো। দেওঘর থেকে ছুটির অবসানে সে চলে গেলে এই সবের স্মৃতি নিয়ে দেওঘরের পথ ঘাট পাহাড় পর্ব্বত নদী নালা ঘর দুয়ার আমার কাছে হয়ে থাকতো ভক্তের তীর্থস্থল; দিন কাটতো সুখ-স্মৃতিতে কেঁদে আর কবিতা লিখে। তাকে চিঠি লেখাও ছিল এক মহোচ্ছব ব্যাপার, যে দিন চিঠি দিতুম আর যে দিন তার ছোট্ট দু’দশ লাইনের উত্তরটি পেতুম সে দিন কাটতো আধজাগা স্বপ্নের ঘোরে।

 বাল্য সঙ্গীদের নিয়েও সান্ধা ভ্রমণ ছিল কতই না সুখকর। যে দিন সখারাম বাবু, সঙ্গে আসতেন সে দিন আর আমাদের পায় কে? থার্ড টিচার বকু বাবুও মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে বেড়াতে যেতেন। মাঝে মাঝে দল বেঁধে ত্রিকুট দিঘড়িয়া ও ও নন্দন পাহাড়ে excursion বেরোন হ’তো। আমাদের সব চেয়ে টেনেছিল শিবাজীর জীবন, কারণ সখারাম বাবু পুরাণো পুঁথিপত্র ঘেঁটে খুঁজে রাশি রাশি উপকরণ সংগ্রহ করছিলেন শিবাজীর এক বিরাট জীবনী লেখবার জন্যে, এইটিই ছিল তাঁর জীবনের সব চেয়ে বড় লক্ষ্য। তখন পর্য্যন্ত তিনি “এটা কোন্ যুগ?” বলে সামান্য একখানা চটি বই ছাড়া আর কিছু প্রকাশ করেন নি। মহারাষ্ট্র বীর শিবাজীর এত বড় গুণগ্রাহী ভক্ত আমি আর দেখি নি, সারা জীবন তিনি উপকরণই সংগ্রহ করে গেলেন, সে বৃহৎ জীবনী লিখে ওঠা আর হলো না।

১১৬