পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

পারে না। আমাদের প্রাণ ভোগের বস্তু রূপে চায় ঠিক আমাদেরই মত মাটির মানুষ—দোষে গুণে অপূর্ণতায় মহত্ত্বে সুন্দর human মানুষ; খুঁৎগুলিই তার যেন আমাদের প্রেমের অন্ধ চোখে সব চেয়ে হয় টানের জিনিস। শিশুর টলমলে চলার মত, আধ আধ ভাষার মত, অর্থহীন হাত পা নাড়ার মত প্রেমাস্পদের ভ্রম ত্রুটিই তাকে সযত্ন সাদরে বুকে তুলে নেবার প্রেরণা দেয়। দেবতা নিয়ে মন আদর্শের রঙীন ফানুস ওড়ায়, প্রাণ তাকে শুধু পূজা করেই সুখ পায় না, ভরে ওঠে না। সে যে চায় আত্মসাৎ করতে, আপন করতে, একেবারে একাঙ্গ ও একাত্ম হতে!

 ছেলে বেলায় দেওঘরের এই স্কুল জীবনে আমার মধ্যে প্রথম নৈতিক পঙ্কিলতা ঢোকে। কুসঙ্গে মিশে অস্বাভাবিক ভাবে শক্তি ক্ষয় করার অভ্যাস আমার হয়েছিল। এই সময়টা আমার জীবনে পাশাপাশি বইছিল পঙ্কিল ও নির্ম্মল জল। অশ্বিনীবাবুর ভক্তিযোগ পড়ে আমি এত উৎকট নীতিবাগীশ হয়েছিলুম যে মেয়ে লোকের পা ছাড়া মুখের দিকে চোখ তুলে দেখতুম না। কাম চেষ্টা দমন করবার জন্যে নাম জপ, সংখ্যা গণনা, জোরে জোরে হাত পা নাড়া, এমনি কত কাণ্ডই করতুম। কিছুতেই কাম বৃত্তি ঘুচতো না। কবিতার উচ্চ ভাব, প্রেম ভগবদ্ভক্তি এবং অধোলোকের কামবৃত্তি পাশাপাশি ঘেঁষাঘেষি পরম আত্মীয়ের মত চলতো। মানুষের জীবনে তাই-ই হয়,—দুধের, নির্ম্মল জলের ও পাঁকের ত্রিবেণী ধারাই

১১৯