পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

কেটা হয়ে পড়েছি—সবার চোখই আমার দিকে, ছাত্রসমাজে আমার দাম ও ওজন যেন জ্বরের পারার মত হঠাৎ ১০৪° ডিগ্রি উঠে গেছে। নিজের দিকে অপর দশজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লোভ মানুষের বুড়া বয়স অবধি থেকে যায়; এই লোভের বশেই তার অর্থ চাই, যশ চাই, প্রতিষ্ঠা চাই, কুলগৌরব চাই, এমন একটা বিশেষ বা অসাধারণ কিছু চাই যা’ আর দশ জনের নেই এবং নেই বলেই তাদের ঈর্ষা ও ঔৎসুক্য জাগায়। মানুষ সারা জীবনই নট, ফুটলাইটের সামনে লুব্ধ জনতার চোখের ওপর সারা জীবনই সে অভিনয় করে চলেছে,—নয় ট্রাজেডি, নয় কমেডি আর নয় প্রহসন।

 পরীক্ষার জন্য ভাগলপুরে যাওয়াই আমার এক রকম প্রথম একা বিদেশে যাওয়া বলতে হবে। বাবার মৃত্যুর পর এই আমার প্রথম কাকার বাড়ী গিয়ে ওঠা, তখন কাকা বেঁচে নেই, ভাগলপুরের বাড়ীতে কাকীমা আছেন আর একজন অবিবাহিতা খুড়তুত বোন্ আছেন। আমার মধ্যে কি একটা আকর্ষণী শক্তি ছিল, প্রথম দেখায়ই অনেককে টানতুম। পরীক্ষা দিতে গিয়ে ছুটির সময় একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছি, একটি ছেলে এসে গায়ে পড়ে আলাপ করলো। পরীক্ষার সেই কয়েকদিনে সে আমার একান্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে পড়লো, ছায়ার মত আমার পিছু পিছু ঘুরতো। পরীক্ষাও হয়ে গেল আর তারও হঠাৎ কি যেন ব্যারাম হয়ে মৃত্যু ঘটলো। যে দিন রাত্রে মরণ তার শিয়রে, ঠিক সেই রাত্রে সেই সময়টিতে কাকার বাড়ীর দরজার কড়া নেড়ে নেড়ে

১২৩