পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

কঠিন হয়, তাড়না করে। কিন্তু যে সমাজে মা-বাপকে স্নেহ মমতা ভুলে, মেয়ের মন-প্রাণের সাধ আকাঙ্ক্ষা ভুলে নিষ্ঠুর হতে হয়, সে সমাজ কি আদর্শ সমাজ? স্বতঃস্ফূর্ত্ত প্রেমই তো মানুষের মিলনের আসল বস্তু? সেই প্রেমই যত কলঙ্ক নিন্দা লজ্জার কারণ? প্রেমকেই সমাজ এমন অপাঙক্তেয় করে রেখে বিবাহের অনুষ্ঠান গুলোকেই এতখানি মূল্য দেবে এইটেই কি হ’লো সুষ্ঠু সমাজ বিধি? মানুষের সুখ কি শুধু সুবিধা নিয়ে?

 আমি এমন দেখেছি যে মা ও বাপ মেয়েকে ঠিক জেলারের মত নির্দয় হয়ে তালা চাবি দিয়ে আটকে রেখেছে, জল্লাদের মত নিষ্ঠুর হয়ে মেরেছে, অকথ্য গালি-গালাজ করেছে; অপরাধ এই যে, মেয়ে হৃদয় দিয়ে ফেলেছে এমন জায়গায় যেখানে সামাজিক বা পারিবারিক সম্বন্ধে বাধে। এত যে আমরা কবিতায় গানে নাটকে স্তুতি করি দিব্য মাতৃস্নেহ বলে সেই মাতৃস্নেহই সামাজিক পারিবারিক বা আর্থিক স্বার্থে আঘাত পেয়ে কি পর্য্যন্ত নিষ্ঠুর ও ক্রূর হতে পারে তা দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়। শিক্ষিত ভদ্র ঘরের মা-বাপ শিক্ষিত উন্নতমনা মেয়েকে বাধা দিয়ে, তালা বন্ধ করে, গঞ্জনা দিয়ে অপমান নির্য্যাতন করে এমন অবস্থায় এনেছে দেখেছি যাতে তার ফিটের রোগ হয়েছে, মাথা খারাপ হয়ে গেছে, স্নায়বিক দুর্ব্বলতায় সে শয্যা নিয়েছে। এর পর মনের দুঃখে সে মেয়ে আত্মঘাতী হতে পারে, পাগল হতে পারে, কি না হতে

১৩৯