পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

গিয়ে প্রকাণ্ড তার পাখা এলিয়ে মাতালের মত টলতে টলতে, আকাশে উড়ন্ত বেলে হাঁস পড়তো উল্টো ডিগবাজী খেয়ে ঝুপ করে। সারস বা বড় মেছো পাখীর মুমূর্ষু অবস্থায় তার রাঙা চোখে কি বিলোল ভয় ও উদ্বেগ যে দেখেছি—সে যেন একটা রঙীন স্বপ্নের সাজানো বাগান হঠাৎ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে, যেন কোথায় লক্‌লকে অগ্নিশিখায় কার প্রাণ পুত্তলী সীতা পুড়ছে বলে চারদিকে উঠেছে করুণ কান্নার ঝড়, যেন ভয়-সন্ত্রস্ত ঊনপঞ্চাশটা পাগল দারুণ প্রাণের মায়ায় ছটফট করে ছুটে বেড়াচ্ছে সেই বিলোল রাঙা চোখের টলটলে দৃষ্টিতে।

 বেলা নয়টায় আন্দাজ আমরা কোন বাঁশ ঝাড়ের ছায়ায় শুকনো কঞ্চি জড়ো করে আগুন জ্বালতুম, আর ঘটিতে করে জল ফুটিয়ে চা তৈরী করে তার সঙ্গে মাংস রুটির sandwich খেতুম। তারপর শিকার করতে করতে দুপুরের রোদ মাথায় উঠলে কোন ঘন আম গাছের ছায়ায় অঙ্গ মেলে দিয়ে একটু বিশ্রাম এবং বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা অবধি পুনরপি নিরর্থক নির্ম্মম প্রাণীবধ ও টো টো করে মাঠ ঘাট বন বাদাড় নদী তীর ধানের ক্ষেত চষে বেড়ানো। বাড়ী ফিরতে হতো রাত আটটা, তখন শিকারীর ঝোলায় হয়তো মরা, আধমরা, ডানা ভাঙ্গা, পা-দুমড়ানো এমন গোটা চল্লিশেক পাখী জমে গেছে। বাড়ীতে ফিরে ঝোলা উপুড় করবা মাত্র তারা সব খোঁড়াতে খোঁড়াতে ডানার ভরে ঝুপ ঝাপ ঝটাপট করে ঘরের কোণে কোণে ছুটাছুটি করতো। তা’ দেখে দিদির মায়ার প্রাণে এত আঘাত লাগতো যে দিদি

১৭০