পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 প্রাণ দিয়ে দেশকে বড় করবো, এ স্বপ্ন আমার আজও প্রাণ মনকে মাতিয়ে তোলে, কিন্তু রক্তপাত আমার কাছে কোন কালেই রুচিকর নয়। মানুষের দুঃখে রোগে ব্যথায় বিপদে এত শীঘ্র কেঁদে ওঠে যার হৃদয় ও প্রাণ তার পক্ষে নিরপরাধ মানুষকে তার স্বজাতির অপরাধে প্রাণে মারতে যাওয়া কি কখন আনন্দদায়ক হতে পারে? আমি ছিলুম আনন্দের পোকা, জগৎ ছিল আমার চোখে রসের ধনি, কি স্বদেশী কি বিদেশী প্রত্যেক মানুষ ছিল তারুণ্যে উন্মুখ আমার কাছে আরব্য উপন্যাসের নায়ক নায়িকা। কবিতা লেখা আর প্রকৃতির হরিত কোলে কৃষি উদ্যান রচনা করার ঘোরাল স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমার এই ভাবে একটা খুনাখুনির মাঝে নামাটা আপাত চোখে বিসদৃশ ও ছন্দপতন মনে হলেও হয়তো পরাধীনতার ব্যথায় আতুর দেশে ঐ রকমই হয়। কত নিপীড়িত পর-পদদলিত দেশে কত কবি শিল্পী ভাবুক প্রেমিক নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে দেশের দরদে, এই মুক্তির পাগল করা স্বপ্নে। ভারতের এই দুর্দ্দিন কেটে গিয়ে জগতে মানুষের মুক্তির যুগ এলে ইংরেজও একদিন বাংলা দেশের এই পাগলামিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবে। আজ রাজনীতির অন্ধ ঝঞ্ঝায় ইংরাজ ও বাঙ্গালী সমান অন্ধ, আপন পর জ্ঞান তাদের হারিয়ে গেছে, এক মানবতার উদার প্রেম সে তো বহু দুরের কথা। তাই আমাদের সুকৃতি দুষ্কৃতির প্রকৃত হিসাব করবার দিন এখনও হয়তো আসে নি।

 কিছু দিন বাঙলা দেশে ব্যর্থ বিপ্লব প্রচেষ্টা করবার পর

১৮৫