পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

সেরে নিয়ে আবার আরম্ভ করি আমার শৈশব-কথা। লালা তারিণীচরণের বাড়ীতে আমার প্রায় আট বছর বয়স হবার পর আমাদের পালে বাঘ পড়লো। কোথা থেকে কি হল জানি নে; একদিন কারা যেন এসে দিদিকে নিয়ে চলে গেল আমাকে এই পাগল মাতৃস্নেহের কারাগারে একলা ফেলে। দিদিমাদের বাড়ী গিয়ে শুনলাম বাবা তার মেয়েকে নিজের কাছে রাখবার জন্যে চেয়ে পাঠিয়েছেন, পাগল মা ৪০০৲ টাকা নিয়ে দিদিকে ছেড়ে দিয়েছে। আগেই বলেছি দিদিকে মা দেখতে পারতেন না, একগুঁয়ে শক্ত মেয়ে দিদি সে বয়সে খুব কম লোকেরই মন বা হৃদয় আকর্ষণ করতে পারতেন। দিদির মত এসব শক্তির আধার দৃঢ় প্রকৃতি নমনীয় ও কোমলকেই শুধু স্নেহে ভালবাসায় আঁকড়ে ধরতে পারে, নিজের মত সমান শক্তিমানের সঙ্গে লেগে যায় তাদের সংঘর্ষ, ঠোকাঠুকি। এ জগতে আশ্রয়দাতাও এসেছে আর আশ্রিতের দলও এসেছে; প্রেমের জগতে একদল ক্ষত্রিয় ও অপর দল শূদ্র। একদলেরা ভালবেসে করে প্রভুত্ব, দেয় কোল, আর একদল আনন্দ পায় পূজা করে, আপনাকে বিলিয়ে দিয়ে—সেবায় প্রেমার্চ্চনায়। এ ছাড়া আবার এই দুই প্রকৃতির অসম মিশ্রণে এমন সব কিম্ভূত কিমাকার মানুষ এসেছে যারা না নেতা আর না নীত। শক্তি নেই অথচ প্রভুত্বের অহঙ্কার ও দুশ্চেষ্টা আছে, সেবার ও আত্মোৎসর্গের সামর্থ্য নেই অথচ নিজকে দেবার তীব্র আকুলি ব্যাকুলি আছে—এই চিত্রই সংসারে বেশী দেখতে পাওয়া যায়।

২২