পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

তার সহায়তা করে। মা বাপের স্নেহ স্বার্থে পঙ্কিল, সংসারের লাভ লোকসান খতানো ভালবাসা, নইলে নিজের নাড়ীছেঁড়া ধনকে মানুষ এত সহজে ত্যাজ্যপুত্র ভ্যাজ্যকন্যা করে যত সহজে রাগী বাপ মা সংসারে সচরাচর করে থাকে?

 মানুষকে কতখানি শাসন করতে হবে, কতখানি মুক্তি ও কতখানি বন্ধন তার বিকাশের অনুকূল, কোন্‌খানে শাসন মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে তাড়নায় পরিণত হ’লো, মানুষকে ফোটাবার বদলে চেপে পঙ্গু করতে লাগল তা’ এখনও মানুষ ঠিক করে উঠতে পারে নি। এই সেদিন অবধি স্কুল পাঠশালা ছিল শিশুর কাছে ঠিক তেমনি ভয়াবহ প্রহার-তাড়না-কণ্টকিত কারাগার, যেমন ছিল তার কৈশোর ও যৌবনের সমাজ, তার প্রৌঢ়ত্বের রাষ্ট্র।

 মা বাপের তাড়না, গুরুমশাইয়ের বেত, বামুন পুরুতের অভিশাপ, সমাজপতির ভ্রুকুটি, দেবতার নরকাগ্নি, রাজার পুলিশ, এবং অবশেষে করাল যমরাজের দূত—ভয়তাড়িত সঙ্কুচিত আড়ষ্ট কি সে জীবন মানুষের বল দেখি? আর তারপরেও এতখানি পীড়ন শাসন তর্জ্জন গর্জ্জন প্রহার অপমান ও প্রাণবধ করেও কি এমন আদর্শ সমাজ বা রাষ্ট্র আমরা গড়েছি যার জন্যে মানর জাতি গর্ব্বে আজ মাথা উঁচু করে জগতের সামনে দাঁড়াতে পারে? মানুষ তার মানবতার গুটি (Crysalis) কেটে দেবত্বের ব্যাপক আকাশে ওড়বার কয়টি বর্ণ-সুরঞ্জিত চিত্রবিচিত্র ডানা আজ অবধি গজাতে পেরেছে?

 যাক সে কথা। কোন গতিকে দাদাদের পূর্ব্বজীবন সংক্ষেপে

২১