পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

“হাঁ মা” বলে সাড়া দিয়ে কিছুক্ষণ উৎকর্ণ আড়ষ্ট হয়ে থাকতাম। মা বেরুলেন না দেখে আবার চাপা গলায় আমাদের আবোল তাবোল কলরব আরম্ভ করতাম।

 সেই সময়ে চারিদিকের জগৎটা কত যে লোভনীয় জিনিসে ভরপুর ছিল তার ইয়ত্তা নেই। এখনও মনে পড়ে উত্তরের সবজী বাগানে একটা শিউলী ফুলের গাছ ভোরের শিশিরে ভিজে কূশমী রঙের বোঁটাওয়ালা সাদা সাদা ফুলের রাশি বিছিয়ে আমাদের কাছে তার সৌরভের প্রাণ পাগল করা আমন্ত্রণ লিপি পাঠাতো আর আমরা সেখানে যাবার জন্যে ছটফট করে মরতুম। পূব কোণে একটা পাতায় পাতায় কালো বিরাট জাম গাছ ছিল, তার থলো থলো গাছভরা কালো জাম আমাদের শিশু মনকে একেবারে পাগল করে তুলতো আর ঐ পূব-দক্ষিণ কোণের খেজুর গাছের গলায় রাঙা ফলের থলোর টান, পশ্চিমের পিচ গাছের পিচ ফলের লোভ, কলমের আম গাছে লম্বা লম্বা বড় বড় আমগুলি— উঃ! সে স্মৃতি কি ভোলবার? মালী মাঝে মাঝে ফলের উপঢৌকন নিয়ে মেম সাহেবকে তুষ্ট করতে এবং কিছু বক্‌সিস্ আদায় করতে আসতো, সে দিন আমাদের পড়ে যেত এক মহোচ্ছবের পালা।

 বাইরের জগতের কিছুই আমি জানতাম না দশ বছর অবধি। অথচ বাইরের জগৎ তার রহস্যে নিবিড় আঙুল বাড়িয়ে দিয়ে অহরহই ডাকতো এই সহজে কুতূহলী শিশু হৃদয় দু’টিকে। আমারই মা না হয় পাগল ছিলেন, কিন্তু এই সংসারের কত

২৫