পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

ঘরের কত মা কতই যে স্নেহের অত্যাচারে আগলে ঘিরে কত শত বুভুক্ষু শিশু হৃদয়কে প্রকৃতির কোল থেকে মাঠে মাঠে ধানের আলে ছুটাছুটি ও বন ভোজনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে রাখে! সে ব্যাকুল মন প্রাণগুলির তাতে কোন উপকারই হয় না, কারণ অবাধ প্রকৃতির কোলের মত একাধারে এত বড় স্কুল ও ক্রীড়াক্ষেত্র শিশু মনের জন্যে আর কি আছে? সেখানে প্রকৃতি-রাণী তার উদ্ভিদ জগতের মাটির জগতের ও জলের বুকে কত না পাতা মুড়ে খুলে আধ মোড়া করে রেখে দিয়েছে; সেখানে আকাশ সিন্ধু বিস্তৃত হয়ে রয়েছে তাদের নীল গভীরতা নিয়ে। মাঠে, বনে, পাথরের ফাটলে, পাতার ঢাকনীর আড়ালে তাদের টল্‌টলে কালো রাঙা প্রবালের ছাই রঙের কত না রকম চোখ নিয়ে ঘুরছে সতর্ক টিকটিকী, বহুরূপী নৃত্যশীল খঞ্জন, বুলবলী, ভীরু কাঠবেড়ালী, শশক, চঞ্চল ফিঙে, তির্য্যকগতি ডোরাকাটা বর্ণবিচিত্র ভুজঙ্গ, কদাকার গঙ্গাফড়িং, অলস শামুক, গুগলী, কুব্জপৃষ্ঠ কচ্ছপ, কত না অনুপম অভিনব জীব পরিবার! এই বিরাট অযত্ন-বিস্তীর্ণ সহজলভ্য জ্ঞানভাণ্ডারের দুয়ার রুদ্ধ করে বৃথা জ্ঞান-গর্ব্বে স্ফীত মুর্খ বাপ মা স্বভাবতঃ কুতূহলী শিশু মনগুলিকে আড়ষ্ট করে রাখে নিরস কঠোর খেলনায় ও বইয়ের পাতায় বেঁধে। তারা বোঝে মাতৃবৎসল পিতৃবৎসল সন্তান, বাপ মায়ের দাস, শৈশব থেকে উচিৎ অনুচিতের জুজুর ভয়ে জবুথবু ভয়ার্ত্ত শিরদাঁড়া-ভাঙা ভালছেলে।

২৬