পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

তা’ অনেকদিন আমি জানতুম না। মায়ের কুলজী সন্তানের কাছে কি অমন করে খোঁজবার জিনিস? তা খোঁজে কেবল মরালিটির হিষ্টীরিয়া-গ্রস্ত এই সমাজ, আর তার ফিটফাট ধোপদস্ত স্তম্ভগুলি। মা কি জানিস তা আমি আমার শৈশব ভরে কখনও জানি নি। এই অজানা রাঙা-মা আমার সে আস্বাদ আমায় প্রথম দেন। আমি সত্যি সত্যিই হয়েছিলুম তাঁর চোখের মণি।

 দু’ তিন মাস পরে পরে একবার করে আমরাও যেতুম খুলনায় বাবার কর্ম্মস্থলে। সে খড়ের ছাওয়া বাড়ীখানি ছবির মত এখনও আমার চোখের সাম্‌নে ভাসছে। সামনে বাগান, বাড়ীতে উঠতেই একটুখানি বারাণ্ডা; তার একপাশে বাবার বসবার ঘর। ভিতরে বড় হল ঘর, তাতে ডিনার টেবিল। হলের দু’ পাশে দু’খানি করে ঘর, ভিতর দিকেও একফালি বারাণ্ডা। প্রকাণ্ড কম্পাউণ্ডের মধ্যে এই বাড়ীখানি। দূরে বাবুর্চ্চিখানা, ঘোড়ার আস্তাবল, মুরগী-হাঁসের ঘর, গোশালা। কম্পাউণ্ডে ঢুকতে বাঁশের জাফরী ঘেরা লতায় ঢাকা একটি বসবার কুঞ্জ। এই ছিল খুলনার প্রবল প্রতাপ মুকুটহীন রাজা ডাক্তার কে ডি ঘোষের আস্তানা। বাবা আমাকে পাশে বসিয়ে টমটম্ হাঁকিয়ে কাজে বের হতেন আর দেখতুম দু’ধারে মানুষ শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ছে, সমস্ত পথ তিনি যেতেন মাথার টুপি তুলতে তুলতে সেই মুহুর্মুহু নমস্কার, সেলাম ও প্রণামের প্রত্যভিবাদন দিতে দিতে। এজলাসে বসে মাজিষ্ট্রেট

৪৭