পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

পিতার সন্তানদের যখন প্রায় আহার নিদ্রা ত্যাগ হবার দাখিল হয়েছে তখন আমার একজন আত্মীয় (সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের একজন চূড়া) এসে মায়ের সঙ্গে কথায় বার্ত্তায় উইলখানি একবার দেখতে চাইলেন। সরল মেয়ে মা আমার উইলখানা তাঁর হাতে এনে দেবামাত্র তিনি পকেটস্থ করে বললেন, “তুমি ছেলে মেয়ে পাবে না আর টাকা কড়ির দাবী যদি কর এই উইল জাল ও তোমাকে বাজারের বেশ্যা বলে কোর্টে প্রমাণ করা হবে।” এই বলে ধর্ম্মপ্রাণ মানুষটি দিব্য গজেন্দ্র গমনে প্রস্থান করলেন।

 মা আমার তো কেঁদেই আকুল। অনেক কান্নাকাটি ধমক চমকের পর একটা সালিসী হয়ে স্থির হ’লো উইল মত কাজ হতে পারে যদি মা রীতিমত দীক্ষা নিয়ে ব্রাহ্ম হন। ছেলে মেয়ে হারাবার ভয়ে আকুল মা প্রথমটা রাজী হলেন, হিন্দুধর্ম্মের আচার-নিষ্ঠায় নিষ্ঠাবতী তাঁর তখন উভয় সঙ্কট উপস্থিত, বাপ পিতামহের ধর্ম্ম ছাড়াও কষ্টকর আবার ছেলে হারানোও তাঁর পক্ষে একটা নিদারুণ দুর্ব্বিষহ ব্যাপার। একদিন ব্রাহ্মসমাজে আচার্য্য আদি সব সেজে গুজে পুলকিত প্রাণে সমবেত হয়েছেন—সেই দিনই রাঙা মায়ের ব্রাহ্মধর্ম্মে দীক্ষিত হবার দিন। মা কিন্তু যথা সময়ে হুজুরে হাজির হলেন না, ধর্ম্ম ত্যাগ করা থেকে মন তাঁর শেষ মুহূর্ত্তে বেঁকে বসলো। ব্রাহ্ম আত্মীয়টি রুদ্র মূর্ত্তিতে এসে অনেক ধমক চমক করলেন, শেষে ব্যাপারটা কোর্টে যায় যায়। কিন্তু খোলা আদালতে স্বামীর নামে একটা কেলেঙ্কারী করাও পতিপ্রাণা হিন্দু মেয়ের পক্ষে কতদূর কঠিন

৭৭