পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

তা সহজেই বোঝা যায়। বাবার এই দ্বিতীয় বিবাহ বিবাহই নয়, আইনের চোখে এক্ট তিন অনুযায়ী প্রথম বিবাহের পর এ বিবাহ বেআইনী অপরাধ। তাঁদের দুজনের ছিল প্রেমের মিলন, অন্তরের বিবাহ—‘যদিদং হৃদয়ং মম তদিদং হৃদয়ং তব’—এই শাস্ত্রবাক্যের অনুসরণে দু’জনের হয়েছিল সহজ স্বাভাবিক হৃদয়-বিনিময়। কিন্তু ধর্ম্মপ্রাণ কি হিন্দু আর কি ব্রাহ্ম সমাজে হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত্ত মিলন তো বিবাহের পক্ষে একটা অবান্তর ব্যাপার, আসল হচ্ছে প্রাণহীন অনুষ্ঠানগুলো। আদালতের বিজ্ঞ জজদের চোখেও তাই, তাঁরা দেখবেন আইন, আর দেখবেন কেতাব মাফিক সম্প্রদান হয়েছিল কিনা, বাপ মা গুরুজন দাঁড়িয়ে মন্ত্র পড়ে এই জবাই কার্য্যটি সমাধান করেছিলেন কিনা।

 অনেক বাক বিতণ্ডা ঘোরাঘুরির পর রফা হল রাঙা মা খোর পোষ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা মাত্র পারেন, ছেলে মেয়ে থাকবে মাতুলালয়ে দেওঘরে, তিন চার মাস অন্তর তিনি তাদের দেখতে পাবেন। ঠিক কি সর্ত্তটা এসম্বন্ধে হয়েছিল তা’ আমার আজ আর মনে নেই কিন্তু তিনি যে ছেলে মেয়েকে প্রায়ই কাছে পাবেন এটা তার মধ্যে ছিল, কতদিন পরে পরে সেটা আমি ভুলে গেছি। একটা দিন স্থির হলো আমাদের ছাড়াছাড়ির, মা আকুল কান্না বুকে চেপে সেই ভীষণ দিনের প্রতীক্ষায় রইলেন। সামনে যদি মৃত্যুদও আসন্ন হ’য়ে থাকে তা’ হলে পরমায়ুর গোণা দিনগুলি হুহু করে চলে যায়। সে কয় দিনের করুণ ব্যাপার

৭৮