পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

আর আমি বর্ণনা করবো না। একদিন আমাকে ও দিদিকে নিয়ে গাড়ী করে মা চললেন সেই আত্মীয়টির বাড়ীতে, জীবন্ত দু’টি তাঁর প্রাণপুত্তলীকে বিসর্জ্জন দিতে—এই বৃথা আশা বুকে পুষে যে তবু যা হোক মাঝে মাঝে তাদের দেখে চোখ জুড়াতে পাবেন। সেখানে বাড়ীর দরজায় পৌঁছে মা আর নামলেন না, দিদিকে প্রথমে নামিয়ে নেওয়া হ’লো। আমি কিছুতেই রাঙা মাকে ছাড়বো না, তাঁকে আঁকড়ে ধরে কান্না জুড়ে দিলুম। সেই আত্মীয়টি তখন টেনে হিঁচড়ে আমায় সেই অপবিত্র কোল থেকে তাঁর পবিত্র সংসারে ছিনিয়ে নিলেন। মা মুখ চেপে চোখ বুদ্ধে অর্দ্ধ অজ্ঞান অবস্থায় গাড়ীতে পড়ে রইলেন, তাঁকে নিয়ে গাড়ী শূন্য-পুরী গোমস্ লেনে ফিরে গেল। এইভাবে সীতা হরণ করে আমায় দু’ দু’বার ছিনিয়ে নিতে হয়েছে, একবার পাগল মায়ের কাছ থেকে আর একবার এই রাঙা মায়ের কাছ থেকে। আরও একবার রাজশক্তি আমাকে সীতা হরণ করে নিয়ে প্রথমে ঘাতকের Death cell-এ এবং তার পর আন্দামানের অশোক বনে রেখেছিলেন! না জানি এখনও দগ্ধ অদৃষ্টে আরও কি আছে; তবে আশা এই যে ৫০-এর কোটা পেরিয়েছি, এখন ‘বনং ব্রজেৎ’-এর পালা বলে যদি রেহাই পাই, আর অদৃষ্টে যত কিছু হতে পারে সে দশ দশাই তো ইতিমধ্যেই হয়ে চুকেছে। বৃদ্ধ বয়সে এখন দারিদ্র্য-দুঃখও এসেছে, এখন—ভোজনং যত্র তত্র শয়নং হট্টমন্দিরে, বাকি শুধু মরণং গোমতী তীরে; সুতরাং অপরম্বা কিং ভবিষ্যতি?

৭৯