পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জানো ওদিকির পথঘাট! কোথা দিয়ে যাবো, কি করবো!

 —হেঁটে যাবেন?

 —নয়তো বাবা পাল্‌কি কে আমাদের জন্যি ভাড়া করে নিয়ে আসচে? হেঁটেই যাবো।

 —এখান থেকে যাবেন—

 —ওরকম করে বললি হবে না। ঈশ্বর বোষ্টম সেথো আমাদের সঙ্গে যাবে। সে কিছু কিছু জানে, তবে তুমি হোলো গিয়ে জাহাজ। তোমার কথা শুনলি— তুমি ওবেলা আমাদের বাড়ি গিয়ে চালছোলাভাজা খাবে। অনেকে আসবে শুনতি।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে বাড়ির মধ্যে এসে তিলুকে বললেন—ওগো, ভূতের মুখে রামনাম!

 —কি গা?

 —ফণি চক্কত্তি আর মামা চন্দ্র চাটুয্যে নাকি যাচ্চেন গয়া-কাশী। এবার তোমার দাদা না বলে বসেন তিনিও যাবেন।

 তিলুর পেছনে পেছনে নিলু বিলুও এসে দাঁড়িয়েছিলো। নিলু বললে—কেন দাদা বুঝি মানুষ না! বেশ!

 —মানুষ তো বটেই। তবে আমি আর সকালবেলা গুরুনিন্দেটা করবো? আমার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা না-ই বেরুলো।

 বিলু বললে—আহা রে, কি যে কথার ভঙ্গি! কবির গুরু, ঠাকুর হরু— হরু ঠাকুর এলেন। দিদি কি বলো?

 তিলু চুপ করে রইল। স্বামীর সঙ্গে তার কোন বিষয়ে দুমত নেই, থাকলেও কখনো প্রকাশ করে না। গ্রামের লোকেও তিলুর স্বামীভক্তি নিয়ে বলাবলি করে। এমনটি নাকি এদেশে দেখা যায় নি। দু’একজন দুষ্ট লোকে বলে— আহা, হবে না? বলে,

কুলীনের কন্যে আমি নাগর খুঁজে ফিরি—
দেশ-দেশান্তরে তাই ঘুরে ঘুরে মরি—

১১৩

ইছামতী-৮