পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সচ্ছলতা। অমন কেলে ধানের সরু চিড়ে আর শুকো দই কারো ঘরে হবে না। সাতটা গোলা বাপের বাড়ির উঠোনে।

 অন্নপূর্ণা বড় দাগা দিয়ে গিয়েছিল জীবনে। পয়সার জন্য এতো? ধানের মরাইয়ের অহঙ্কার এতো? ৺সনাতন চৌধুরীরই বা ক'টা ধানের গোলা। যদি পুরুষমানুষ হয় প্রসন্ন চক্কত্তি, যদি সে রতন চকন্তির ছেলে হয়-তবে ধানের মরাই কাকে বলে সে দেখিয়ে দেবে—ওই অন্নপূর্ণাকে দেখাবে একদিন।

 একদিন অন্নপূর্ণা তাকে বললে, বেশ মনে আছে প্রসন্ন চক্কত্তির, চৈত্র মাস, গুমোট গরমের দিন, ঘেঁটুফুল ফুটেছে বাড়ির সামনের বাঁশনি বাঁশের ঝাড়ের তলায়, বললে-~~আমার নারকোল ফুল ভেঙে বাউটি গড়িয়ে দেবা?

 প্রসন্ন চক্কত্তির তখন অবস্থা ভালো নয়, বাবা মারা গিয়েছেন, ও সামান্য টাকা রোজগার করে গাঁড়াপোতর হরিপ্রসন্ন মুখুয্যের জমিদারী কাছারীতে। ও বললে—কেন, বেশ তো নারকোল ফুল, পর না, হাতে বেশ মানায়।

 —ছাই! ও গাঁধা যায় না। বিয়ের জিনিস, ফঙ্গবেনে জিনিস। আমায় বাউটি গড়িয়ে দাও।

 —দেবো আর দুটো বছর যাক।

 —দু’বছর পরে আমি মরে যাবো।

 —এমন কথা বলতে নেই, ছিঃ

 —এক কড়ার মুরোদ নেই, তাই বলো। এমন লোকের হাতে বাবা আমায় দিয়ে দিল তুলে! দোজবরে বিয়ে আবার বিয়ে? তাও যদি পুষতো তাও তত বুঝ দিতে পারি মনকে। অদৃষ্টের মাথায় মারি ঝাটা সাত ঘা।•••

 এই বলে কাঁদতে বসলো পা ছড়িয়ে সেই সতেরো বছরের ধাড়ী মেয়ে। এতে মনে ব্যথা লাগে কি না লাগে? তার পরের বছর আশ্বিন মাসে বাপের বাড়ি চলে গেল, আর আসেনি। সে আজ সাত-আট বছরের কথা।

 এর পরে ও রাজনগরে গিয়েছে দু’তিনবার বৌকে ফিরিয়ে আনতে। অন্নপূর্ণার মা শুচ্ছির কথা শুনিয়ে দিয়েছে জামাইকে। মেয়ে পাঠায়নি। বলেছে-মূবোদ থাকে তো আবার বিয়ে কর গিয়ে। তোমাদের বাড়ি ধানসেদ্ধ কররার জন্যি

১৫১