পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 খেপী সন্ন্যাসিনী একমনে শুনতে শুনতে বললে-তিনি বেঁচে নেই?

 —চৈতন্য ভারতী বলে আমার এক গুরুভাই এসেছিলেন আজ কয়েক বছর আগে। তখন বেঁচে ছিলেন। তারপর আর খবর জানিনে।

 —মন্ত্রদাতা গুরু?

 —এক রকম। তিনি মন্ত্র দিতেন না কাউকে। উপদেষ্ট গুরু।

 —আমার বড্ড ইচ্ছে ছিল দেখতি যাই। তা বয়স বেশি হোলো, অত দূরদেশে হাঁটা কি এখন পোষায়?

 —আমাদের দেশে রেলের গাড়ি হচ্চে শুনেচ?

 —শোনলাম। রেলগাড়ি হলি আমাদের চড়তি দেবে না সায়েব সুবো চড়বে?

 —আমার বোধ হচ্চে সবাই চড়বে। পয়সা দিতে হবে।

 —আমার দেবতা এই অশ্বথ্‌তলাতেই দেখা দ্যান ঠাকুরমশাই। আমরা গরীব লোক, পয়সা খরচ করে যদি না-ই যেতে পারি গয়া কাশী বিন্দাবন, তবে কি গরীব বলে তিনি আমাদের চরণে ঠাঁই দেবেন না? খুব দেবেন। রূপেও তিনি সব জায়গায়, অরূপেও তিনি সব জায়গায়। এই গাছতলার ছায়াতে আমার মত গরীবির কুঁড়েতে তিনি বসে গাঁজা খান আমাদের সঙ্গে-

 —অ্যাঁ!

 —বললাম, মাপ করবেন ঠাকুরমশাই। বলাডা ভুল হোলো। এ সব গুহ্য কথা। তবে আপনার কাছে বললাম, অন্য লোকের কাছে বলিনে।

 ভবানী হেসে চুপ করে রইলেন। যার যা মনের বিশ্বাস তা কখনো ভেঙে দিতে নেই। ভগবান যদি এদের সঙ্গে বসে গাঁজা খান বিশ্বাস হয়ে থাকে, তিনি কে তা ভেঙে দেবার? এই সব অল্পবুদ্ধি লোক আগে বিরাটকে বুঝতে চেষ্টা করে না, আগে থেকেই সেই অনন্তের সঙ্গে একটা সম্বন্ধ পাতিয়ে বসে থাকে। অসীমের ধারণা না হোক, সেই বড় কল্পনাও তো একটা রস। রস উপলব্ধি করতে জানে না-আগেই ব্যগ্র হয় সেই অসীমকে সীমার গণ্ডিতে টেনে এনে তাঁকে ক্ষুদ্র করতে।

২৯২