পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —কেন, পারবি নে?

 —ঠাকুরজামাই আসতে দেবেন?

 —না, তোকে মারবে এখন।

 —আমার বড্ড ভালো লাগলো আজ। কে এসব কথা এখানে শোনাবে দিদি? আমার জন্যে শুধু ঝ্যাঁটা আর লাথি। শুধু শাশুড়ীর গালাগাল দু’বেলা। তাও কি পেট ভরে দুটো খেতি পাই? হ্যাঁ পাপ করিচি, স্বীকার করচি। তখন বুদ্ধি ছিল না। যা করিচি, তার জন্যি ভগবানের কাছে বলি, আমারে আপনি যা শাস্তি হয় দেবেন।

 —থাক ওসব কথা। তুই রোজ আসবি যখন ভালো লাগবে।

 —ঠাকুরজামাই দেবতার তুল্য মানুষ। এ দিগরে অমন মানুষ নেই। আমার বড্ড সৌভাগ্যি যে তোমাদের সঙ্গ প্যালাম। ঠাকুরজামাইকে একদিন নেমতন্ন করে খাওয়াতি বড্ড ইচ্ছে করে।

 —তা খাওয়াবি, ওর আর কি?

 —আমার যে বাড়ি সে রকম না। জানোই তো সব। লুকিয়ে লুকিয়ে একটু তরকারি নিয়ে আসি—কেউ জানতি পারে না। জানলি কত কথা উঠবে।

 —আমাকে কি নিলুকে সেই সঙ্গে নেমতন্ন করিস, কোনো কথা উঠবে না।

 ওরা ঘাটের ওপর উঠেছে, এমন সময়ে দেখা গেল সেই পথ বেয়ে রামকানাই কবিরাজ এদিকে আসচেন। রামকানাই ভিন্ গাঁ থেকে রোগী দেখে ফিরচেন, খালি পা, হাঁটু অবধি ধুলো, হাতে একটা জড়িবুটি-ওষুধের পুঁটুলি। তিলু পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলে, দেখাদেখি নিস্তারিণীও করলে। রামকানাই সঙ্কুচিত হয়ে বললেন—ওকি, ওকি দিদি? ও সব কোরো না। আমার বড্ড লজ্জা করে। চলো সবাই আমার কুঁড়েতে। আজ যখন বাঁড়ুয্যে মশাইকে পেইচি তখন সন্দেটা কাটবে ভালো।

 রামকানাই চক্রবর্তী থাকেন চরপাড়ায় এই গ্রামের উত্তর দিকের বড় মাঠ পার হলেই চরপাড়ার মাঠ। তিলু নিস্তারিণীকে বললে—তুই ফিরে যা বাড়ি—আমরা যাচ্চি চরপাড়ার মাঠে—

৩১৩