পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 তিল বললে-খোকনের ভাত দেবেন কবে?

 —ভাত হবে উপনয়নের সময়।

 —ওমা, সে আবার কি কথা? তা হয় না, আপনি অন্নপ্রাশনের দিনক্ষ্যাণ দেখুন। ও বললি চলবে না।

 —তোমাদের বাঙালদেশে এক রকম, আমাদের আর এক রকম। এসব চলবে না আমাদের নদে-শান্তিপুরের সমাজে। তুমি ওকে একটু আদর কর দিকি?

 তিলু তার সুন্দর মুখখানি খোকনের মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে কানের মাকড়ি দুলিয়ে দুলিয়ে অনবদ্য ভঙ্গিতে আদর করতে লাগলো—ও খোকন, ও সনলু, তুমি কার খোকন? তুমি কার সনলু, কার মানকু? সঙ্গে সঙ্গে খোকা মায়ের চুল ক্ষুদ্র একরত্তি হাতের মুঠো দিয়ে অক্ষম আকর্ষণে টেনে এনে, মায়ের মাথার লুটন্ত কালো চুলের কয়েক গাছি নিজের মুখের কাছে এনে খাবার চেষ্টা করলে। তারপর দন্তবিহীন একগাল হাসি হাসলে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে।

 ভবানী বাড়ুয্যে একবার আকাশের দিকে চাইলেন, নক্ষত্রখচিত অনন্ত আকাশ-নিচে এই মা ও ছেলের ছবি। অমনি স্নেহময়ী মা আছেন এই বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে, নইলে এই মা, এই স্নেহ এখানে থাকতো না—ভবানী বাড়ুয্যে ভাবেন।

 ভবানী কত পথে পথে বেড়িয়েছেন, কত পর্বতে সাধু-সন্নিসির খোঁজ করেছেন, কত যোগাভ্যাস করেচেন, আজকাল এই মা-ছেলের গভীর যোগাযোগের কাছে তাঁর সকল যোগ ভেসে গিয়েছে। অনুভূতি সর্বাশ্রয়ী, সর্বমঙ্গশকর সে অনুভূতির দ্বারপথে বিশ্বের রহস্য যেন সবটা চোখে পড়লো। ক্ষণশাশ্বতীর অমরত্ব আসা- যাওয়ার পথের এই রেখাই যুগে যুগে কবি, ঋষি ও মরমী সাধকের খোজেন নি কি?

 তিনি আছেন তাই এই মা আছে, ছেলে আছে, ফুল আছে, স্নেহ আছে, আত্মত্যাগ আছে, সেবা আছে, প্রেমিকা আছে, প্রেমিক আছে।

 ভবানীর মনে আছে তিনি একবার কানপুরে একজন প্রসিদ্ধ খেয়াল গায়কের গান শুনেছিলেন, তার নাম ছিল কানহাইয়া লাশ সান্তারা, প্রসিদ্ধ গায়ক

৬৮