পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১২৭



বৃষভ পর্বত দেখিতে র্যাড়ের মতন, তাহাতে গন্ধর্বেরা থাকে। সেখানে নানারকম চন্দন গাছ আছে, কিন্তু তাহার কথা কাহাকেও জিজ্ঞাসা করিলে বড়ই বিপদ হয়। সেখানেও তাহারা সীতাকে খুঁজিয়াছিল।

 চন্দনগিরি নামক পর্বতে একরকম পক্ষী থাকে, তাহার নাম সিংহ পক্ষী। তাহারা হাতি আর তিমিমাছ ধরিয়া খায়। সেই পক্ষীর বাসায় তাহারা সীতাকে খুঁজিয়াছিল।

 সুমেরু পর্বত পার হইলে অস্তাচল;সেখানে সূর্য অস্ত যান। ততদূর পর্যন্ত তাহারা সীতাকে খুঁজিতে গিয়াছিল। তাহার পর কেবল অন্ধকার; সেখানে কেহই যাইতে পারে না।

 উত্তরকুরু দেশের নদীতে সোনার পদ্ম ফোটে, আর তাহার তীরে মুক্ত ছড়ানো থাকে। সেই দেশে তাহারা সীতাকে খুঁজিয়াছিল।

 তাহার পরে উত্তর সমুদ্র। তাহার মাঝখানে সোমগিরি নামক সোনার পর্বত আছে। সূর্য না উঠিলেও, সোমগিরির আলোকেই পরিষ্কার দেখিতে পাওয়া যায়। সোমগিরি বড় ভয়ানক পর্বত সেখানে বানরেরা যাইতে পারে নাই।

 এইরূপ করিয়া তাহারা সীতাকে খুঁজিয়া বেড়াইল, কিন্তু কোথাও তাঁহার সন্ধান পাইল না। এক মাস পরে আর সকলেই কিষ্কিন্ধ্যায় ফিরিয়া আসিল; কেবল হনুমান আর তাহার সঙ্গে যাহারা গিয়াছিল, তাহারা এখনও ফিরে নাই।

 হনুমান, অঙ্গদ, তার, আর জাম্ববান, অনেক বানর লইয়া দক্ষিণ দিকে গিয়াছিল। তাহারা অনেক খুঁজিয়াও সীতাকে দেখিতে পাইল না। প্রথমে ভয়ানক একটা বনের ভিতর ঘুরিয়া ঘুরিয়া তাহারা কাহিল। তারপর সেখান হইতে যে জায়গায় আসিল, তাহ আরও ভয়ঙ্কর। সে পোড়া দেশে গাছপালা নাই, জীবজন্তু জন্মাইতে পায় না, নদীসকল শুকাইয়া গিয়াছে, এক ফোঁটা জল পর্যন্ত পাইবার জো নাই। কবে কণ্ডু বলিয়া এক মুনি ছিলেন, এই হতভাগ্য দেশে তাহার পুত্রের মৃত্যু হয়। সেই পুত্রের শোকে কণ্ডু মুনি দেশটাকে শাপ দিয়া তাহার এই দশা করিয়া গিয়াছেন। যাহা হউক, সেখানেও তাহারা সীতার কোন সন্ধান পাইল না।

 সেখান হইতে তাহারা আর একটা বনে গিয়া ঢুকিবামাত্রই একটা বিকটাকার অসুর তাহাদিগকে তাড়িয়া মারিতে আসিল। অঙ্গদ মনে করিল, বুঝি এটাই রাবণ। এই মনে করিয়া সে তাহাকে এক চড় মারিল যে, সে চড় খাইয়া আর তাহার উঠিয়া যাইতে হইল না। এক চড়েই অসুরের বাছা মাটিতে পড়িয়া ছটফট করিয়া অস্থির।

 কিন্তু এত খুঁজিয়াও সীতার সন্ধান পাওয়া গেল না। এদিকে ক্ষুধা তৃষ্ণায় তাহদের প্রাণ যায়, আর চলিবার শক্তি নাই। এমন সময়ে তাহারা একটা প্রকাণ্ড গর্তের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল। সে গর্তের নাম ঋক্ষ বিল। তাহার ভিতর হইতে হাঁস, সারস প্রভৃতি পক্ষী উড়িয়া বাহির হইতেছিল। সে সকল পক্ষীর শরীরে জল দেখিয়া তাহারা মনে করিল যে, নিশ্চয়ই এই গর্তের ভিতরে জল আছে।

 এই মনে করিয়া তাহারা সেই গর্তের ভিতর ঢুকিল। গর্তের মুখের কাছে খানিক দূর পর্যন্ত ভয়ানক অন্ধকার, কিন্তু সেই অন্ধকারের পরেই একটি অতি সুন্দর এবং আশ্চর্য স্থান। সেখানকার সকলই সোনার। গাছপালাও সোনার, জলের মাছও সোনার, পদ্মফুলও সোনার। কেবল পদ্মের কাছে যে মৌমাছি উড়িতেছে তাহ মানিকের।

 সেই স্থানে ঘুরিতে ঘুরিতে তাহারা একটি তপস্বিনী দেখিতে পাইল। তাহার শরীরে এত