তেজ যে, দেখিলে মনে হয় যেন আগুন জ্বলিতেছে। তাহারা তপস্বিনীকে প্রণাম করিয়া জোড়হাতে বলিল, মা, আমরা ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর হইয়া এখানে আসিয়াছি। এ আশ্চর্য দেশ কাহার, আর এ সকল জিনিস কী করিয়া সোনার হইল, তাহা জানিতে আমাদের বড়ই ইচ্ছা হইতেছে।”
তপস্বিনী বলিলেন, “বাছা, এ স্থান ময় নামক দানবের তৈয়ারি। তোমরা এখানে কেন আসিয়াছ? ইহা যে অতি ভয়ঙ্কর স্থান।’ এই বলিয়া তিনি নানারকম মিষ্ট ফল আর ঠাণ্ডা জল আনিয়া বানরদিগকে খাইতে দিলেন। বানরেরা তাহা খাইয়া তাহাকে অনেক ধন্যবাদ দিল।
এদিকে আর-এক নূতন বিপদ উপস্থিত। সেই গর্তের ভিতরে ঘুরিয়া ঘুরিয়া তাহদের এক মাস চলিয়া গেল, তবুও তাহারা বাহিরে আসিবার পথ পায় না। তাহা দেখিয়া সেই তপস্বিনী তাহাদিগকে বলিলেন, বাছাসকল, এ গর্তের ভিতর একবার আসিলে কেহই জীবন্ত বাহিরে যাইতে পারে না। যাহা হউক, তোমাদের কোনও ভয় নাই। তোমরা খানিক চোখ বুজিয়া থাক আমি তোমাদিগকে বাহিরে লইয়া যাইতেছি। এই কথা শুনিয়া বানরেরা সেখানে চোখ বুজিয়া রহিল;তারপর চাহিয়া দেখিল যে, তাহারা বাহিরে বিন্ধ্য পর্বতের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। নিকটে সমুদ্র, তাহার গর্জন শোনা যাইতেছে।
গর্তের বাহিরে আসিয়া কিন্তু তাহদের একটুও আনন্দ হইল না;বরং নানা চিন্তায় তাহদের মন অস্থির হইয়া উঠিল। তাহদের তখন বার-বার এই কথা মনে হইতে লাগিল, ‘এখন দেশে গিয়া কী বলিব? এক মাস তো চলিয়া গেল;কিন্তু হায়, সীতার কোন সংবাদই পাওয়া গেল না! এখন কোন মুখে দেশে ফিরিব? সুগ্রীব আগেই বলিয়াছেন যে এক মাসের ভিতর না ফিরিলে তিনি মারিয়া ফেলিবেন। কাজেই আর কিসের ভরসায় বা দেশে ফিরিব? তাহার চেয়ে এইখানে না খাইয়া মরা অনেক ভাল।’
সুতরাং তাহারা স্থির করিল যে, তাহারা আর দেশে না গিয়া সেইখানেই না খাইয়া মরিবে। এইরূপে মরিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া তাহারা খাওয়া দাওয়া ছাড়িয়া দিয়া দক্ষিণ মুখে সমুদ্রের ধারে বসিয়া রহিল;তখন তাহদের কান্না ছাড়া আর কোন কাজ রহিল না। তাই তাহারা রামের কথা, সীতার কথা, জটায়ু পাখির কথা আর নিজেদের দুঃখের কথা বলিয়া কেবলই কাঁদিতে লাগিল।
সেই বিন্ধ্য পর্বতের উপরে জটায়ুর দাদা সম্পাতি পাখি থাকিত। সে বানরদিগকে দেখিয়া বলিল, অনেক দিন পরে আমার জন্য এতগুলি খাবার জিনিস উপস্থিত হইয়াছে। আমার বড়ই ভাগ্য! এই সকল বানরের এক-একটা মরিবে আর আমি খাইব।’
এইথা শুনিয়া অঙ্গদ হনুমানকে বলিল, ‘ঐ দেখ যম নিজেই পাখি সাজিয়া আমাদিগকে লইতে আসিয়াছে। আমাদের প্রাণ গেল, তবুও রামের কাজ হইল না! জটায়ু যুদ্ধ করিয়া সীতার জন্য প্রাণ দিয়াছিল, জটায়ুই সুখী!'
জটায়ুর নাম শুনিয়া সম্পাতি কাদিতে কাঁদিতে বলিল, হায়! কে তোমরা আমার প্রাণের ভাই জটায়ুর মৃত্যুর কথা বলিতেছ? জটায়ু কেমন করিয়া মরিল? আমার পাখা পুড়িয়া গিয়াছে আমি উড়িতে পারি না। তোমরা আমাকে ধরিয়া নামাও।
সম্পাতির কথায় প্রথমে বানরদের বড় ভয় হইল, পাছে পাখিটাকে পাহাড় হইতে নামাইলে সে তাহাদিগকে ঠোকরাইয়া খাইতে আরম্ভ করে। কিন্তু শেষে তাহারা ভাবিল, আমরা যখন