পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১৪৯

সহিত যুদ্ধ জুড়িয়াছে। আবার দেখিতে দেখিতে রামের বাণ খাইয়া পাঁচজনেই পালাইবার পথ পাইতেছে না।

 আর এক স্থানে অঙ্গদ আর ইন্দ্রজিতে যুদ্ধ। অঙ্গদ লাথি মারিয়া, ইন্দ্রজিতের সারথি আর ঘোড়া চ্যাপ্টা করিয়া দিয়াছে। ইন্দ্রজিৎ দেখিল, সামনে থাকিয়া যুদ্ধ করিলে বড়ই বিপদ। কাজেই তখন সে মেঘের আড়ালে লুকাইয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিল। এইরূপ যুদ্ধ করিবার বর সে শিবের নিকট পায়। যখন সে মেঘের আড়ালে লুকাইয়া যুদ্ধ করিত, তখন কেহই তাহাকে দেখিতে পাইত না। কাজেই তখন তাহাকে কেহই মারিতে পারিত না; কিন্তু সে নিজে অন্য সকলকে বাণ মারিয়া অস্থির করিত।

 মেঘের আড়ালে থাকিয়া দুষ্ট ইন্দ্রজিৎ রাম লক্ষ্মণের গায়ে নাগপাশ বান মারিল। সে বাণ ছুড়িবামাত্রই বড় বড় সাপ আসিয়া তাহাদিগকে জড়াইয়া ফেলল। ইন্দ্রজিৎকে দেখিতে না পাওয়ায় তাহারা তাহা আটকাইতে পারিলেন না।

 এইরূপে সে রাম লক্ষ্মণকে সাপের বাঁধনে বাধিয়া তাহাদের উপর এমনি নিষ্ঠুর বাণ মারিতে লাগিল যে তাহাদের শরীরে একটুও স্থান রহিল না যেখানে বাণ বিধে নাই। সেই ভয়ানক বাণের যন্ত্রণায় তাহারা অজ্ঞান হইয়া গেলেন। তাহা দেখিয়া ইন্দ্রজিৎ হাসিতে হাসিতে গিয়া রাবণকে বলিল, “বাবা, রাম লক্ষ্মণকে মারিয়া আসিয়াছি।’

 এদিকে সুগ্রীব, বিভীষণ, অঙ্গদ, হনুমান জাম্ববান প্রভৃতি সকলে রাম লক্ষ্মণকে ঘিরিয়া কাদিতে লাগিল। বানরদিগের মধ্যে সুষেণ ভাল ঔষধ জানিত। সে বলিল, ক্ষীরোদ সাগরের তীরে বিশল্যকরণী আর সঞ্জীবনী নামক ঔষধ আছে চন্দ্র আর দ্রোণ নামক পর্বতের উপরে সেই ঔষধ পাওয়া যায়। শীঘ্র তাহা হইয়া আইস।’

 এমন সময় ভয়ানক ঝড় উঠিয়া গাছপালা ভাঙিতে লাগিল, অজগরেরা তাড়াতাড়ি গর্তের ভিতরে লুকাইতে চলিল, সমুদ্রের জন্তু আর আকাশের পক্ষীসকল ভয়ে অস্থির হইয়া উঠিল। গোলমাল শুনিয়া সকলে চাহিয়া দেখিল, গরুড় আসিতেছে;তাহারই পাখার বাতাসে এরূপ কাণ্ড উপস্থিত। গরুড়কে দেখিয়াই ইন্দ্রজিতের সাপের ভবিল, সর্বনাশ! আমাদের যম আসিয়াছে!’ তখন তাহারা রাম লক্ষ্মণকে ছাড়িযা প্রাণ লইয়া পলাইতে পারিলে বাঁচে। গরুড়কে সাপেরা বড়ই ভয় করে, কারণ সে সাপ দেখিলেই ধরিয়া খায়।

 গরুড় রাম লক্ষ্মণের গায়ে হাত বুলাইয়া দিবামাত্রই, তাহাদের শরীরের সকল জ্বালা চলিয়া গেল, এমন-কি, বাণের দাগ পর্যন্ত রহিল না। তখন দুই ভাই আবার সুস্থ হইয়া উঠিয়া বসিলেন। তাঁহাদের বোধ হইতে লাগিল, যেন তাহাদের জোর আর সাহস দ্বিগুণ বাড়িয়া গিয়াছে।

 গরুড়কে দেখিয়া রাম বলিলেন, ‘পাখি, তুমি কে? বড়ই ভয়ানক বিপদ হইতে তুমি আমাদিগকে বাঁচাইলে!’ গরুড় বলিল, “আমার নাম গরুড়, ইন্দ্রজিৎ তোমাদিগকে বাধিয়াছে শুনিয়া তাড়াতাড়ি এখানে আসিয়াছি। তোমাদিগকে আমি বড়ই ভালবাসি। এখন যাই, এই যুদ্ধে তোমরা নিশ্চয় জিতিবে। এই কথা বলিয়া গরুড় চলিয়া গেল। রাম লক্ষ্মণকে সুস্থ দেখিয়া, বানরদিগের আনন্দের আর সীমা রহিল না। সে আনন্দে তাহারা কোলাহল করিয়া লঙ্কা কাঁপাইয়া তুলিল।

 বানরের কোলাহল শুনিয়া রাবণ বলিল, রাম লক্ষ্মণ ত মরিয়া গিয়াছে, তবে আবার