পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
 ২৪৩

নগরের ভিতরে গেলে, লোকে আমাদিগকে চিনিয়া ফেলিবে। সুতরাং এইগুলিকে একটা ভালো জায়গায় লুকাইয়া রাখা আবশ্যক৷

 সেইখানে একটা শ্মশানের পাশে পাহাড়ে উপরে প্রকাণ্ড শমী গাছ ছিল। অৰ্জুন বললেন, ‘এই গাছে অস্ত্র-শস্ত্র রাখিলে কেহই জানিতে পারিবে না৷’

 সেই শমী গাছে উঠিয়া, নকুল তাঁহাদের সকলের ধনুক, তৃণ, শঙ্খ, বর্ম, খড়গ প্রভৃতি বেশ করিয়া বাধিয়া রাখিলেন। তারপর শ্মশান হইতে একটা মড়া আনিয়া তাহাও ঐ গাছে বধিলেন। মড়া বাঁধিবার কারণ এই যে, তাহা হইলে গন্ধে, আর ভূতের ভয়ে, কেহ আর সে গাছের নিকটে আসিবে না৷

 তারপর তাঁহারা তাঁহাদের প্রত্যেকের আর-একটি করিয়া নাম রাখিলেন। যুধিষ্ঠির ‘জয়’, ভীম ‘জয়ন্ত’, অৰ্জুন ‘বিজয়’, নকুল ‘জয়ৎসেন’, সহদেব ‘জয়দ্বল’ এগুলি হইল তাঁহাদের গোপনীয় নাম, অর্থাৎ এ-সকল নামের কথা আর কেহ জানিতে পারিল না। কাজেই ইহার কোনো-একটা নাম লইলে কেহ বুঝিয়া ফেলিবারও ভয় রহিল না৷

 মহারাজ বিরাট পাত্রমিত্র সমেত সভায় বসিয়া আছেন, এমন সময় যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণের বেশে, পাশা হাতে ধীরে ধীরে তথায় উপস্থিত হইলেন। দূর হইতে তাঁহাকে দেখিয়া, বিরাট সভার লোকদিগকে বলিলেন, ‘উনি কে আসিতেছেন? গরিবের মতো পোশাক বটে, কিন্তু চেহারা দেখিলে মনে হয় যেন কোনো রাজা হইবেন৷’

 যুধিষ্ঠির আস্তে আস্তে তাঁহার সম্মুখে আসিয়া বলিলেন, ‘মহারাজের জয় হউক। দুঃখে পড়িয়া আপনার কাছে আসিয়াছি। দয়া করিয়া আশ্রয় দিলে বড় উপকার হয়।’

 বিরাট বলিলেন, তুমি কে বাপুঃ কোথা হইতে আসিতেছ? কি কাজ করিতে পার? যুধিষ্ঠির বলিলেন, মহারাজ, আমি ব্রাহ্মণ, আমার নাম কঙ্ক। রাজা যুধিষ্ঠিরের বন্ধু ছিলাম। আমি পাশা খেলায় বিশেষ দক্ষ৷”

 বিরাট যুধিষ্ঠিরকে দেখিয়াই ভালবাসিয়াছিলেন, তাহাতে আবার তাঁহার নিজের পাশা খেলার খুব সখ। কাজেই তিনি যুধিষ্ঠিরকে আদর করিয়া কাছে রাখলেন। সকলকে বলিয়া দিলেন ‘ইনি আমার বন্ধু, তোমরা আমাকে যেমন মান্য কর, ইহাকে তেমনি মান্য করবে৷’

 তারপর রসুয়ে বামুনের সাজে ভীম আসিয়া উপস্থিত, হাতা-বেড়ি হাতে, সিংহের মতন চেহারা। দূর হইতে তাঁহাকে দেখিয়াই বিরাট ভারি আশ্চর্য হইয়া গেলেন। রাজার হুকুমে কয়েকজন লোক ছুটিয়া ভীমের পরিচয় লইতে গেল। ভীম তাহাদিগকে গ্রাহ্য না করিয়া, একেবারে রাজ্যের সম্মুখে আসিয়া বলিলেন, ‘মহারাজ, আমার নাম বল্লভ, আমি পাচক, অতি উত্তম ব্যঞ্জন রাঁধতে পারি, আমাকে রাখিতে আজ্ঞা হউক।’

 বিরাট কহিলেন, ‘তোমার চেহারা দেখিয়া তো তোমাকে রাধুনি বলিয়া মনে হয় না!’

 ভীম বলিলেন, মহারাজ! আমি রাঁধুনিই বটে, আপনার চাকর। পূর্বে মহারাজ যুধিষ্ঠিরের প্রধান পাচক ছিলাম। অল্প-অল্প পালোয়ানীও জানি। মহারাজ আমার কাজ দেখিলে সন্তুষ্ট হইবেন৷

 এইরূপে ভীম বিরাট রাজ্যের রসুই মহলের কর্তা হইয়া, পরম সুখে সেখানে বাস করিতে লাগিলেন৷

 এদিকে দ্রৌপদী একখানি ময়লা কাপড় পরিয়া সৈরিন্ধীর বেশে রাজপথ দিয়া চলিয়াছেন৷