পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৫৩

অর্জুন অনেক ঠাট্টা করায় রাগের ভরে আবার আসেন। এবারে ভীষ্ম প্রভৃতি সকলে তাঁহার সাহায্য করিতে লাগিলেন। তাঁহারা সকলে মিলিয়া অর্জুনের উপরে বাণ মারিতে আরম্ভ করিলে অর্জুন অতি চমৎকার উপায়ে তাঁহাদিগকে জব্দ করেন। এবার কাহাকেও মারিবার চেষ্টা না করিয়া, তিনি ‘সম্মোহন’ নামক অস্ত্র ছুড়িয়া মারিলেন। সেই আশ্চর্য অস্ত্র ছাড়িয়া শঙ্খে ফু দিবামাত্রই, সকলে অজ্ঞান হইয়া ঘুমাইয়া পড়িল। তখন উত্তরার সেই কথা মনে করিয়া, তিনি উত্তরকে বলিলেন, ‘তুমি শীঘ্র গিয়া দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা আর দুর্যোধনের গায়ের কাপড়গুলি লইয়া আইস। সাবধান ভীষ্মের কাছে যাইও না। তিনি এই অস্ত্র থামাইবার সঙ্গেত জানেন, হয়তো তিনি অজ্ঞান হন নাই৷’

 অর্জুনের কথা যে ঠিক, তাহার পরিচয় হাতেই পাওয়া গেল। কর্ণ, দুর্যোধন, প্রভৃতির কাপড় আনিয়া, উত্তর ভালো করিয়া রথে বসিতে না বসিতেই, ভীষ্ম উঠিয়া আবার যুদ্ধ আরম্ভ করিয়াছেন। কিন্তু অর্জুনের দশ বাণ খাইয়া বুড়ার আর যুদ্ধ করিতে হইল না৷

 এদিকে দুর্যোধন জাগিয়া উঠিয়াই ভারি চোটপাট আরম্ভ করিয়াছেন, “আপনারা কিজন্য অর্জুনকে এত সহজে ছাড়িয়া দিতেছেন? শীঘ্র উহার ঘাড় ভাঙ্গিয়া দিন৷”

 তখন ভীষ্ম হাসিয়া বলিলেন, “দুর্যোধন, এতক্ষণ তোমার বুদ্ধি কোথায় ছিল? অজ্ঞান হইয়া যখন গড়াগড়ি খাইতেছিলে, তখন অর্জুন ইচ্ছা করলেই তো তোমাদের কর্ম শেষ করিয়া দিতে পারিত! সে ধার্মিক লোক, তাই দয়া করিয়া তোমাদিগকে ছাড়িয়া দিয়াছে। তাই ঢের, এখন প্রাণ থাকিতে ঘরে ফিরিয়া চলো৷

 আর কি দুর্যোধনের মুখে কথা আছে! তাঁহাব মাথা হেঁট হইয়া গিয়াছে, লম্বা নিশ্বাস বহিতেছে। এদিকে অর্জুন বাণের দ্বারা ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ প্রভৃতিকে নমস্কার করিয়া, আর-এক বাণে দুর্যোধনের মুকুটটি দুইখান করিয়া গোরু লইয়া শঙ্খ বাজাইতে বাজাইতে ঘরে ফিরিলেন৷

 ফিরিবার সময় পথে অর্জুন উত্তরকে বলিলেন, সাবধান! ঘরে ফিরিয়া কিন্তু আমার নাম করিও না। আমরা যে তোমাদের এখানে আছি, তাহা যেন তোমাদের লোকেরা না জানিতে পারে৷

 তারপর সেই শমী গাছের নিকটে আসিয়া অর্জুন আবার বৃহন্নলার বেশে, রাজপুত্রের সারথি হইয়া বসিলেন। গোয়ালারা তাঁহাদিগকে বিশ্রাম করিতে বসাইয়া, তাড়াতাড়ি নগরে সংবাদ পাঠাইল যে, “যুদ্ধে জিতিয়া গোরু ছাড়ানো হইয়াছে৷”

 এদিকে রাজা বিরাট দেশে ফিরিয়া, মেয়েদের নিকট শুনিলেন যে, উত্তর বৃহন্নলাকে সারথি করিয়া, কৌরবদিগের নিকট হইতে গোরু ছাড়াইয়া আনিতে গিয়াছে। এই সংবাদে তাহার মনে কিরূপ চিন্তা ও ভয় হইল, তাহা বুঝিতেই পার। তিনি তাড়াতাড়ি সৈন্যদিগকে বলিলেন, “তোমরা শীঘ্র তাহাকে খুঁজিতে যাও। হায় হায়! একে ছেলেমানুষ, তাহাতে বৃহন্নলা সারথি, সে কি আর এতক্ষণ বাঁচিয়া আছে?”

 এ কথায় যুধিষ্ঠির বলিলেন, “মহারাজ, কোনো ভয় নাই। বৃহন্নলা যখন সারথি তখন দেব, দানব যক্ষ প্রভৃতি সকলে মিলিয়াও রাজকুমারের কিছু করিতে পারিবে না৷”

 এই সময় সংবাদ আসিল, “যুদ্ধ জিতিয়া গোৰু ছাড়ানো হইয়াছে৷” তাহা শুনিয়া যুধিষ্ঠির বলিলেন, “বৃহন্নলা যাহার সারথি তাহার তো জয় হইবেই৷”