পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৮৫

 যুধিষ্ঠির আর উপায় না দেখিয়া, অভিমন্যুকেই বলিলেন, “বাব। আমরা তো এ ব্যুহে প্রবেশ করিবার কোন উপায় জানি না। এখন অর্জুন আসিয়া যাহাতে আমাদের নিন্দা না করেন, তাহা কর।”

 অভিমন্যু বলিলেন, “আমি এ বৃহে প্রবেশ করিতে ভয় পাই। কিন্তু আপনি যখন বলিতেছেন, তখন অবশ্যই যাব।”

 এ কথায় যুধিষ্ঠির আর ভীম বলিলেন, “তুমি কেবল পথটুকু করিয়া দাও তারপর তোমার পিছু পিছু আমরা ঢুকিয়া বাকি যাহা করিবার সব করিব।”

 এ কথায় অভিমন্যু তাহার সারথি সুমিত্রকে চক্রব্যুহের দিকে রথ চালাইতে বলিলে, সুমিত্র বিনয় করিয়া বলিল, “কুমার, বড়ই কঠিন এবং ভয়ংকর কাজে হাত দিতেছেন; একবার ভাবিয়া দেখুন।”

 অভিমন্য বলিলেন, “তুমি চল। নিজে ইন্দ্র দেবতাদিগকে লইয়া আসিলেও আজ আমি যুদ্ধ করিব।”

 সুতরাং সারথি আর বিলম্ব না করিয়া রথ চালাইয়া দিল। আর অমনি, হরিণের না পাইলে বাঘ যেমন করিয়া আসে, সেইরূপ করিয়া কৌরব যোদ্ধাগণ বালক অভিমন্যুকে আক্রমণ করিলেন। কিন্তু বয়সে বালক হইলে কি হয়? সেই আঠারো বৎসরের ছেলে দ্রোণের সামনেই ব্যুহ ভেদ করিয়া বড় বড় কৌরবদিগকে একধার হইতে বাণের ঘায়ে অচল করিতে লাগিলেন। কত লোক মরিল, কত পলাইয়া গেল, তাহার কি সংখ্যা আছে? অশ্মকেশর মরিলেন, কর্ণ অজ্ঞান হইলেন, শল্য অজ্ঞান হইলেন, শল্যের ভাই মারা গেলেন, ছেটখাট যোদ্ধার তো কথাই নাই।

 অভিমন্যুর বীরত্ব দেখিয়া দ্রোণ কৃপকে বলিলেন, “ইহার মতো যোদ্ধা বোধহয় আর কোথাও নাই। এ ইচ্ছা করিলে আমাদের সকলকে মারিয়া শেষ করিতে পারে।”

 এ কথা কিন্তু দুর্যোধনের সহ্য হইল না। তিনি বলিলেন, “অর্জুনের পুত্র বলিয়া দ্রোণ ইচ্ছ করিয়াই ইহাকে মারিতেছে না। তাই এই মূর্থের এত স্পর্ধা হইয়াছে। চল, আমরা সকলে মিলিয়া ইহাকে বধ করি।”

 দুঃশাসন বলিলেন, “ইহাকে মারিলে, অর্জুন কাদিতে কাঁদিতে আপনিই মরিয়া যাইবে। অর্জুন মরিলে পাণ্ডবেরাও মরিবে। সুতরাং আমি এখনই ইহাকে মারিয়া আপনার সকল আপদ দুর করিয়া দিতেছি।”

 দুঃশাসন এইরূপ গর্ব করিয়া অভিমন্যুকে মারিতে গেলেন, আর তাহার খানিকক্ষণ পরেই দেখা গেল যে তিনি চিৎ হইয়া রথে পড়িয়া খাবি খাইতেছে, আর সারথি সেই রথ হাঁকাইয়া বায়ুবেগে পলায়ন করিতেছে।

 কর্ণ দুবার আসিয়া দুবারই নাকালের একশেষ হইলেন; তাহার এক ভাই তো মরিয়াই গেল।

 কিন্তু হায়।যাহারা এত উৎসাহ দিয়া অভিমন্যুকে ব্যুহের ভিতরে পাঠাইছিলেন,তাহাদের কেহই তাঁহার সঙ্গে ব্যুহে প্রবেশ করিতে পারিলেন না। একা জয়দ্রথ যুদ্ধ করিয়া তাহাদের সকলকে ফিরাইয়া দিতে লাগিলেন। তিন বাণে সাত্যকি, আট বাণে ভীম, ষাট বাণে দাম, দশবাণে বিরাট, পাঁচ বাণে দ্রুপদ, দশ বাণে শিখণ্ডী, সত্তর বাণে যুধিষ্ঠির, এইরূপে সকলকেই