পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

চতুর্থ দৃশ্য

(বিচারালয়। ব্যস্তভাবে বেচারামের প্রবেশ)

 বেচা। দোহাই হুজুর, আমাকে ধনে-প্রাণে মেরেছে। ও হো হো (ক্রন্দন)

 বিচারক। আরে ব্যাপার কি? তোমার কি হয়েছে?

 বেচা।(কাঁটার আঁচড় ও ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখাইয়া)—আর কি হবে, আমি ধনে-প্রাণে গিয়েছি। বড় রাস্তাব ধারে ঐ কেনা বেটা আমাকে মেরে ধরে টাকাকড়ি কেড়ে নিয়েছে এঁ হেঁ হেঁ (ক্রন্দন)। বেটাকে তিন বছর আমি খাইয়ে মানুষ কলুম, আর তার এই প্রতিশাধ দিলে। বেটা দিনরাত বেহালা নিয়ে ফেরে, এখনি ধরতে পাঠান, তাকে দেখলেই চিনতে পারবেন।

 বিচারক। চারজন লোক এখনি গিয়ে কেনারামকে ধরে নিয়ে এসো।

(কেনারামকে লইয়া চারজন লোকের প্রবেশ)

 বেচা। ঐ! ঐ! ঐ বেটা। হুজুর! কেনারাম বেটা আমার সর্বনাশ করেছে, বেটাকে আচ্ছা করে—

 বিচারক। চুপ। (কেনার প্রতি) তুমি একে মেরে এর টাকা কেড়ে নিয়েছ?

 কেনা। সে কি? হজুর! উনি আমার বেয়ালা বাজানো শুনে আমায় এক থলি টাকা পুবস্কার দিয়েছন— আমি যথার্থ বলছি।

 বিচারক। ওর যে চেহাবা দেখছি, তাতে ও যে বেহালা শুনে তোমায় এতগুলো টাকা দিয়েছে তা আমি কিছুতে বিশ্বাস কত্তে পারি নে। আর ওর গায়েও এই-সব দাগ দেখছি। সুতরাং প্রমাণ হচ্ছে তুমিই ওকে মেরে টাকার থলি কেড়ে নিয়েছ। এ ডাকাতি; ডাকাতির শাস্তি ফাঁসি—তোমার ফাঁসি হবে। এখন তোমার যদি কোন আকাঙ্খা থাকে ত বলো।

 কেনা। হুজুর, আমার আর কোন সাধ নেই। খালি এ জন্মের মত বেয়ালাখানা একবার বাজাতে চাই।

 বেচা। সর্বনাশ! হুজুর এমন হুকুম দেবেন না।

 চাপরাসী। (বেচারামকে রুলের গুঁতা মারিয়া) চুপ্ রও।

 বিচারক। আর কোন সাধ তোমার নেই? আচ্ছা বাজাও।

 (কেনারামের উৎসাহের সঙ্গে বেহালাবাদন ও বিচারক হইতে চাপরাসী পর্যন্ত সকলের নৃত্য)

 বিচারক (হাঁফাইতে হাঁফাইতে)। আরে বাপু! থাম্ থাম্; শিগগির থাম্; তোকে বেকসুর খালাস দিচ্ছি, প্রাণ যায়—থাম্। বাপরে, এ কিরকম বেহালা বাজনা!

 কেনা (সেলাম করিয়া)। হুজুর বেচুবাবুকে এখন সমস্ত সত্য ঘটনা বলতে হুকুম হয়। নইলে আমি পুনরায় বেয়ালায় ছড়ি দিলাম।

 বিচারক (বেচারামেব প্রতি সরোষে)। বল্ বেটা কি হয়েছিল, সত্যি করে এখনি বল্।

 বেচা। ওগো, না গো, আর বেহালা ধরো না। ও টাকা আমিই দিয়েছি— দিয়েছি।

 বিচারক। তুই এত টাকা কোথা পেলি, বল্।

 বেচা। আমি—আমি—