পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫১৩

 এই বলিয়া তিনি সেই পোকাটিকে নিজের গলায় রাখিয়া হাসিতে লাগিলেন। কিন্তু হায়! তাহার সেই হাসি অতি অল্পক্ষণের জন্যই দেখা দিয়াছিল। সেই পোকাই ছিল তক্ষক। রাজার হাসির সঙ্গে সঙ্গে সে নিজ মূর্তি ধারণ করিয়া ভীষণ গর্জনের সহিত তাহার গলা জড়াইয়া ধরিল! তারপর কি হইল, আর বলিয়া কি হইবে?

 এই রূপে পরীক্ষিতের মৃত্যু হইলে, সকলে মিলিয়া তাহার শিশুপুত্র জনমেজয়কে হস্তিনার রাজা করিল।

 সে সময় হয়ত জনমেজয় এ-সকল ঘটনার অর্থ ভাল করিয়া বুঝিতে পারেন নাই। কিন্তু বড় হইয়া তিনি অনেক সময় এ বিষয়ের চিন্তা করিতেন। একদিন তিনি পাত্রমিত্র সমেত সভায় বসিয়া রাজ্যের কাজ দেখিতেছেন, এমন সময় উতঙ্ক নামক একটি মুনি আসিয়া তাহাকে বলিলেন, “মহারাজ! আসল কাজের কথা ভুলিয়া ছেলেমানুষের মতন, কেন সামান্য কাজে ব্যস্ত রহিয়াছেন?”

 মুনির কথা শুনিয়া জনমেজয় বলিলেন, “কেন, আমি ত রাজ্যের কাজ আমার সাধ্যমত করিতেছি। আপনি আর কোন্ কাজের কথা বলিতেছেন?”

 মুনি বলিলেন, “আমি যে কাজের কথা বলিতেছি, আর সকল কাজের আগে, তাহাই আপনার কাজ। দুরাত্মা তক্ষক যে আপনার পিতাকে বধ করিয়াছিল, তাহার প্রতিশোধ না লইয়া, আপনি আর কোন্ কাজের কথা ভাবিতেছেন? সেই দুষ্ট বিনা দোষে আপনার পিতার প্রাণনাশ করিয়াছিল।

 কাশ্যপ মহারাজকে বাঁচাইতে আসিতেছিলেন, পাপিষ্ঠ তাঁহাকে পথের মাঝখান হইতে ফিরাইয়া দিল। এই দুরাত্মাকে শাস্তি দিতে আর বিলম্ব করবেন না। শীঘ্র সর্পযজ্ঞের আয়োজন করিয়া, উহাকে তাহার আগুনে পোড়াইয়া মারুন। ইহাতে আমারও কাজ হইবে। আমি গুরুর জন্য দক্ষিণা আনিতে গিয়াছিলাম, পথে ঐ দুষ্ট আমাকে বড়ই কষ্ট দিয়াছে।”

 উতঙ্ককে তক্ষক কি কষ্ট দিয়াছিল, তাহা এখানে বলিয়া কাজ নাই। উহার নিকট পরীক্ষিতের কথা শুনিয়া জনমেজয় অমাত্যগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার পিতার মৃত্যু কিরূপে হইয়াছিল?”

 এ কথায় অমাত্যগণ পরীক্ষিতের মৃত্যুর সকল বৃত্তান্ত শুনাইলে, তিনি অনেকক্ষণ চুপ করিয়া চোখের জল ফেলিলেন। তারপর তিনি ক্রোধভরে বলিলেন, “হে অমাত্যগণ, আমি যাহা বলিতেছি তাহা তোমরা শোন দুষ্ট তক্ষক যে আমার পিতার প্রাণ বধ করিয়াছিল, ইহার উচিত শাস্তি তাহাকে দিতেই হইবে।”

 তারপর তিনি ঋত্বিকগণকে (যে-সকল মুনি যজ্ঞ করেন) ডাকাইয়া বলিলেন, “দুরাত্মা তক্ষক আমার পিতাকে বধ করিয়াছিল, আমি তাহার প্রতিফল দিতে চাহি। আপনারা এমন কোন যজ্ঞের কথা জানেন কি না, যাহা দ্বারা আমি সেই দুষ্টকে ভাই বন্ধু সকল সুদ্ধ আগুনে পোড়াইয়া মারিতে পারি?”

 ঋত্বিকগণ বললেন, “মহারাজ। পুরাণে লেখা আছে যে, ঠিক আপনার এই কার্যের জন্যই বহুকাল পূর্বে, দেবতাগণ সপর্যজ্ঞ নামক একটা যজ্ঞের ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছেন। ঐ যজ্ঞ করিলে নিশ্চয়ই তক্ষকের মৃত্যু হইবে।”

 একথা শুনিয়া জনমেজয় আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করিলেন না। তখনই যজ্ঞের আয়োজন

উপেন্দ্র—৬৫