পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৭২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

যাই! উহার অনেক ধন আছে।” এই বলিয়া তাহারা অগস্ত্যকে নিয়া ইম্বলের নিকট উপস্থিত হইলেন।

 তাহাদিগকে দেখিয়া ইম্বলের আর সৌজন্যের সীমাই নাই। সে নমস্কার দণ্ডবৎ কতই করিল, তাহার উপর আবার ভাই বাতাপিকে এই বড় পাঁঠা সাজাইয়া তাহার মাংসে চমৎকার কোরমা রাঁধিল। সেই মাংস রান্নার সন্ধান পাইয়া রাজা মহারাজেরা তো কাঁপিয়াই অস্থির, কেননা, তাহা খাইলে যে কি হয়, সে কথা তাঁহারা বিলক্ষণ জানিতেন। যাহা হউক অগস্ত্য তাঁহাদিগকে ভরসা দিয়া বলিলেন, “আপনাদের কোনো চিন্তাই নাই আমি সব ঠিক করিয়া দিতেছি।”

 তারপর পাতপিঁড়ি প্রস্তুত হইলে সকলে খাইতে বসিলেন। ইম্বল হাসিতে হাসিতে সেই মাংস পরিবেশন করিতে আসিল, অগস্ত্যও হাসিতে হাসিতে তাহার সমস্তই খাইয়া শেষ করিলেন, রাজাদিগকে দিবার জন্য কিছুই অবশিষ্ট রাখিলেন না। তারপর যখন ইম্বল ডাকিল, ‘বাতাপি! বাতাপি!’ তখন তিনি হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “বাতাপি আর কি করিয়া আসিবে? তাহাকে হজম করিয়া ফেলিয়াছি!”

 কেহ কেহ বলেন যে, এ কথায় ইম্বল অগস্ত্যকে মারিতে গিয়াছিল আর অগস্ত্য তাহাকে ভস্ম করিয়া ফেলিয়াছিলেন। কিন্তু অন্যরা বলেন যে, ইম্বল অত্যন্ত ভয় পাইয়া অগস্ত্যকে অনেক ধন দিয়াছিল।

 আর একবার অগস্ত্য বিন্ধ্য পর্বতকে বড়ই নাকাল করিয়াছিলেন। বিন্ধ্য পর্বতের মাথা ক্রমে এতই উঁচু হইয়া উঠিয়াছিল যে, তাহাতে সূর্যের চলাফেরার পথ বন্ধ হইয়া যায়। বৎসরের মধ্যে একবার সূর্যকে উত্তর হইতে দক্ষিণে যাইতে হয়, আবার দক্ষিণ হইতে উত্তরে আসিতে হয়। বিন্ধ্য পর্বতের মাথা এত উঁচু হইয়া যাওয়াতে সুর্যের সেই কাজটি করা অসম্ভব হইয়া পড়িল।

 সূর্য দেখিলেন, তাঁহার ব্যবসায়ই মাটি হইতে চলিয়াছে;কাজেই তিনি অগস্ত্যের নিকটে আসিয়া বলিলেন “ঠাকুর! আমি তো বড়ই সংকটে পড়িয়াছি, এখন আপনি যদি আমাকে উদ্ধার করেন।” অগস্ত্য বলিলেন, “আপনার কোনো চিন্তা নাই, আমি বিন্ধ্য পর্বতের মাথা নিচু করিয়া দিতেছি।” এই বলিয়া তিনি যারপরনাই বুড়া একটি মুনি সাজিয়া বিন্ধ্য পর্বতের নিকট গিয়া বলিলেন, “বাপু, আমি তীর্থ করিতে দক্ষিণ দেশে যাইব। কিন্তু আমি বুড়া মানুষ, তোমাকে ডিঙ্গাইতে পারি, এমন শক্তি আমার নাই। তুমি একটু নিচু হও, আমি তীর্থ করিয়া আসি।”

 মুনির কথায় বিন্ধ্য পর্বত মাথা নিচু করিয়াছিল। তখন মুনি তাহার উপর দিয়া দক্ষিণে গিয়া বলিলেন, “যতক্ষণ আমি তীর্থ করিয়া ফিরিয়া না আসি, ততক্ষণ এমনিভাবে থাক, নহিলে কিন্তু ভারি শাপ দিব।” কাজেই বিন্ধ্য আর কি করে? সে হেঁট মুখেই পড়িয়া রহিল। তদবধি আর বেচারা অগস্ত্যের দেখাও পায় নাই, শাপের ভয়ে মাথাও তুলিতে পারে নাই।