পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুরাণের গল্প
৭১৩

আপনি যা করছেন তাতে আমরা আমোদই পেয়েছি। আপনার দিন দিন সৌভাগ্য বাড়তে থাকুক।”

 তখন আবার বাজনা বেজে উঠল, সকলে সেজে প্রস্তুত হল, দেবতারা মনের সুখে বর কনে নিয়ে কৈলাসে যাত্রা করলেন। হিমালয় আর মেনকা সকলকে নিয়ে এঁদের গন্ধমাদন পর্বত অবধি এগিয়ে দিয়ে, ঘরে ফিরে এসে ভাবলেন, ‘হায়, সব যে অন্ধকার! কোথায় গেল আমাদের পার্বতী?”


রাবণ

 রাবণের কথা তোমরা সকলেই জান। রাবণের পিতার নাম বিশ্রবা, মায়ের নাম কৈকসী। বিশ্রবা পরম ধার্মিক মুনি ছিলেন। রাবণ আর তাহার ভাইবোনেরা জন্মিবার পূর্বেই তিনি বলিয়াছিলেন যে, ইহাদের সকলের ছোটটি খুব ধার্মিক হইবে, আর সকলেই ভয়ংকর দুষ্ট রাক্ষস হইবে।

 মুনি যাহা বলিয়াছিলেন, তাহাই হইল। রাবণ, কুম্ভকর্ণ আর তাহাদের বোন সূর্পনখা, ইহাদের এক একটা এমনি বিকট আর দুষ্ট রাক্ষস হইল যে কি বলিব। ইহাদের ছোট ভাই বিভীষণও রাক্ষস ছিল বটে কিন্তু সে যারপরনাই ভালো লোক ছিল।

 রাবণের দশটা মাথা আর কুড়িটা হাত ছিল। দাঁতগুলো ছিল থামের মতো বড়-বড়। চুলগুলি আগুনের শিখার মতো লাল, আর শরীরটা কালো পর্বতের মতো বিশাল। তাহার জন্মের সময় পৃথিবী কাঁপিয়াছিল, সূর্য ময়লা হইয়া গিয়াছিল আর সমুদ্রের জল তোলপাড় হইয়া উঠিয়াছিল। দশটা মাথা দেখিয়া তাহার পিতা তাহার নাম রাখিয়াছিলেন দশগ্রীব’। উহাই উহার আসল নাম, রাবণ নাম পরে হইয়াছিল।

 ছেলেবেলায় রাবণ ভাইদিগকে লইয়া দশ হাজার বৎসর ভয়ংকর তপস্যা করিয়াছিল। এই দশ হাজার বৎসর সে আহার করে নাই। এক এক হাজার বৎসর যাইত আর নিজের এক একটি মাথা কাটিয়া সে আগুনে আহুতি দিত। নয় হাজার বৎসরে নয়টি মাথা সে এইরূপ করিয়া আগুনে দিল। তারপর দশ হাজার বৎসর পূর্ণ হইলে, যেই সে তাহার বাকি একটি মাথাও কাটিতে যাইবে, আমনি ব্রহ্মা আসিয়া বলিলেন, “দশগ্রীব, আমি খুশি হইয়াছি, এখন তুমি বর লও।”

 দশগ্রীব বলিল, “আমাকে অমর করিয়া দিন।” ব্রহ্মা বলিলেন, “সেটি হইবে না, অন্য বর লও।” দশগ্রীব বলিল, “তবে এই বর দিন যে দানব, দৈত্য, যক্ষ, রক্ষ, নাগ, পক্ষী ইহাদের কেহই আমাকে মারিতে পরিবে না।” ব্রহ্মা বলিলেন, “আচ্ছা তাহাই হইবে। তাহা ছাড়া তোমার যে মাথাগুলি কাটিয়া দিয়াছ তাহাও ফিরিয়া পাইবে, ইহার ওপর আবার যখন যেরূপ তোমার ইচ্ছা হয়, তেমনি চেহারা করিতে পরিবে।”

 কুম্ভকর্ণ আর বিভীষণও এই দশ হাজার বৎসর খুব তপস্যা করিয়াছিল, সুতরাং ব্রহ্মা তাহাদিগকেও বর দিতে গেলেন। বিভীষণ বলিল, “আমাকে দয়া করে এই বর দিন, যেন আমার ধর্মে মতি থাকে।” এ কথায় ব্রহ্মা অতিশয় তুষ্ট হইয়া তাহাকে সে বর তো দিলেনই

উপেন্দ্র—৯০