পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮১৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কোন স্থলে প্রায় কুড়ি ইঞ্চি লম্বা দাগ দেখা গিয়াছে; আর তাহার এক একটা দাগ প্রায় পাঁচ ফুট অন্তর পড়িয়াছে।

 যাহা হউক এগুলি যে পাখির পায়ের দাগ নয়, দু-একটা জানোয়ারের হাড় আবিষ্কার হইলেই তাহা জানা গেল।

 এই সকল জন্তুকে সাধারণভাবে একটা শ্রেণীভুক্ত করিয়া মোটের উপর তাহাদের নাম ‘ডাইনোসর’ রাখা হইয়াছে। ডাইনোসর শব্দের অর্থ ‘ভয়ানক কুমির’। কুমির বলিলেই আমরা তাহাকে যথেষ্ট ভয়ানক মনে করি; তাহার উপর আবার ভয়ানক কুমির! সেটা যে কতখানি ভয়ানক ছিল একবার কল্পনা কর। সাধারণ কুমিরগুলি হাজার ভয়ানক হইলেও তাহারা হামাগুড়ি দিয়া চলে আর জল ছাড়িয়া বেশি দূরে যাইতে পারে না। কিন্তু একটা ডাইনোসর আসিলে সে দশ বার মাইল পথ হাঁটিয়া গিয়া তোমার সঙ্গে দেখা করিতে কিছুমাত্র আপত্তি করিবে না; আর একটিবার সাক্ষাৎ পাইলে তোমারই মতন দুপায়ে ছুটিয়া তোমাকে তাড়া করিবে। ইহার উপর যদি সে একটা হাতির মতন, কি তাহার চাইতেও বড় হয়, আর তাহার সঙ্গে সঙ্গে লাফাইয়া ঘাড়ে পড়িবাব বদ অভ্যাসটাও তাহার থাকে, তবে ব্যাপারখানা কিরকম দাঁড়ায়, বুঝিতেই পার। বড় ভাগ্য যে এরা এখন আর পৃথিবীতে নাই।

 যাহা হউক, সকল ডাইনোসরই যে খুব ভয়ানক ছিল তাহা নহে। একে তো ইহাদের সকলগুলি এত বড় হইত না, তাহার উপর আবার খুব প্রকাণ্ড গুলিরও অনেকে নিরামিষভোজী নিরীহ জন্তু ছিল।

 সকলের চাইতে বড় যে ডাইনোসরের কঙ্কাল পাওয়া গিয়াছে, তাহা এই শ্রেণীর নিরীহ জন্তু। ইহার নাম ‘ব্রণ্টোসরস্’ অর্থাৎ বজ্র কুম্ভীর। তিমি ভিন্ন এত বড় জন্তু আর পৃথিবীতে নাই। এই জন্তু চলিবার সময় নিশ্চয় মাটি কাঁপিত, আর তাহার পায়ের ধুপ ধাপ শব্দ অনেক দূর হইতে শুনা যাইত। আজকালকার এক একটা টিকটিকি যেমন ট্যাক্-ট্যাক্ শব্দ করে, ব্রণ্টোসোরসের তেমন করার অভ্যাস থাকিলে, সে শব্দ যে বাজ পড়ার শব্দের চাইতে কম হইত, তাহা বোধ হয় না। একটা হাতি চ্যাঁচাইলে তাহা দুই তিন মাইল দূর হইতে শুনা যায়। হয়ত দশ মাইলের কম তাহার আওয়াজ যাইত না।

 কয়েক বৎসর হইল, আমেরিকার ‘ইয়োমিং’ নামক প্রদেশে একটা ব্রণ্টোসোরসের কঙ্কাল পাওয়া গিয়াছে। এই কঙ্কাল একশো ছাপ্পান্ন ফুট লম্বা। ইহার ওজন প্রায় পৌনে ছয়শত মণ। আস্ত জন্তুটা দেড় হাজার মণের কম ভারি ছিল না। তাহার পাঁজরের ভিতরে চল্লিশ-পঞ্চাশ জন লোকের স্থান হয়।

 পিছনের পায় ভর দিয়া চলার অভ্যাস ইহার ছিল বলিয়া বোধ হয় না। তবে বেজি যেমন এক একবার হাত গুটাইয়া উঠিয়া বসে, ব্রণ্টোসোরসেরও হয়ত মাঝে মাঝে ঐরূপ করিয়া চারিদিক চাহিয়া দেখিবার অভ্যাস ছিল। উঁচু গাছের কচি পাতাগুলি খাইতে হয়ত মাঝে মাঝে তাহার লোভ হইত। তাহা ছাড়া আশেপাশে ভয়ানক শত্রুর বাস, তাহাদের কোন্‌টা কোন্‌দিক হইতে আসিয়া আক্রমণ করে, তাহার ঠিকানা ছিল না। সুতরাং এক একবার চারিদিক দেখিয়া লইবার প্রয়োজনও ছিল।

 ব্রণ্টোসোরস্ উঠিয়া বসিলে প্রায় একশো ফুট উঁচু হইত। আজকালকার প্রকাণ্ড তাল গাছ আর নারিকেল গাছগুলির আগা খুঁটিয়া খাওয়া তাহার পক্ষে নিতান্তই সোজা কাজ ছিল