পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৬৭

 আর একটা টিয়া স্পেন দেশে একটা বাড়িতে থাকত সেইখানে সে কয়েকটা স্পেন দেশী কথা শিখেছিল। তারপর একজন ইংরাজ কাপ্তেনের কাছে তাকে বেচে ফেলা হয়। কাপ্তেনের সঙ্গে ইংলণ্ডে এসে দিনকতক পাখিটি বড়ই বিষন্ন হয়ে থাকত, কিন্তু সেটা ক্রমে শুধরে এল। শেষে সে ইংরাজী শিখে স্পেন দেশী কথা সব ভুলেও গেল। এমনিভাবে অনেক বছর যায়। ততদিন বুড়ো থুরথুরে হয়ে বেচারার এমনি অবস্থা হল যে সে কিছু খেতে পারে না, এমন-কি, ভালো করে দাঁড়ে উঠে বসতেও পারে না। এমন সময় একদিন স্পেন দেশ থেকে একটি ভদ্রলোক সেই বাড়িতে এলেন। তার মুখে স্পেন দেশী কথা শুনেই পাখিটির হঠাৎ সেই ছেলেবেলার সব কথা মনে পড়েছে। অমনি সে আনন্দে অধীর হয়ে পাখা মেলে চীৎকার করে উঠ্‌ল আর সেই ছেলেবেলায় যে-সব স্পেন দেশী কথা শিখেছিল অনেক বছর ধরে যার একটি বর্ণও বলে নাই, সেই কথাগুলি আওড়াতে আওড়াতে মরে গেল।

 ব্রেজিল দেশে একটা টিয়া নাকি এমনি বুঝে শুনে কথা উত্তর দিতে পারত যে তা শুনে সে দেশের শাসনকর্তা সেটাকে দেখবার জন্য আনালেন। পাখিটা এসেই সেখানে অনেক সাহেব দেখে বলল, “কত সাহেব।” শাসনকর্তাকে দেখিয়ে সকলে জিজ্ঞাসা করল “ইনি কে?” টিয়া বলল, “সেনাপতি হবে!” সে কোথা থেকে এসেছে, কার পাখি সব সে শাসনকর্তাকে বলল। শেষে শাসনকর্তা জিজ্ঞাসা করলেন, “তুই কি করিস?” সে বলল, “হ্যাঁ মুরগির ছানা দেখি।” শাসনকর্তা হেসে বললেন, “তুই মুরগির ছানা দেখিস্?” সে বলল, “হ্যাঁ খুব পারি।” এই বলে ঠিক মুরগি যেমন করে তার ছানাদের ডাকে, তেমনি শব্দ করতে লাগল।

 আর একটা টিয়ার মাথা গরম জলে ঝল্‌সে নেড়া হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে সে টাকপড়া লোক দেখলেই বলত, “মাথা ঝলসে গেছে!”

 টিয়াপাখি অনেকদিন বাঁচে। একশো বছরের টিয়াপাখিও নাকি দেখা গিয়াছে। কিন্তু সাধারণত এদের আয়ু কুড়ি-তিরিশ বছর হয়ে থাকে। বেশি বুড়ো হলে এদের ঠোঁট এত বেশি বেঁকে যায় যে আর তা দিয়ে খাবার তুলতে পারে না।

 টিয়াপাখিরা এমন কথা কইতে পারে, গানও গাইতে পারে শুনেছি, কিন্তু তাদের স্বাভাবিক ডাক বড়ই কর্কশ। এই ডাকটি শুনেই এই পাখির ‘কীর’ নাম রাখা হয়েছিল। এরা আবার অনেকগুলি মিলে দল বেঁধে থাকে, আর সকালে বিকালে সবাই জুটে প্রাণ ভরে চ্যাঁচায়। তখন ব্যাপারখানা কেমন হয় মনে করে দেখ।

 এদের মধ্যে আমাদের দেশী টিয়া আর আফ্রিকার ছেয়ে রঙের টিয়া খুব কথা কইতে পারে। আমেরিকার বড়-বড় টিয়াগুলির নাম ম্যাকাও (MacaW)। এদের গায়ে পালক থাকে না, আর এরা তেমন কথাও কইতে পারে না। কিন্তু এদের গায়ের রঙ ভারি জমকাল।

 টিয়াপাখিরা পরস্পরকে খুব ভালোবাসে। একটির কোনোরকম বিপদ হলে আর গুলো কিছুতেই তাকে ফেলে যেতে চায় না। এমন ঘটনাও হয়েছে যে শিকারীর বন্দুকের গুলিতে সঙ্গীদের দলে দলে মরতে দেখেও তারা তাদের ছেড়ে পালায়নি, বরং প্রাণের ভয় ছেড়ে দিয়ে তাদের নিয়ে দুঃখ করেছে, আর তাই দেখে লজ্জা পেয়ে শিকারীদের বন্দুক ছোঁড়া বন্ধ করতে হয়েছে।