পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৯৭

বাঘের প্রাণ ছিল ততক্ষণ মহিষ তাহাকে গুঁতাইয়াছিল আর মাড়াইয়াছিল। তারপর পাগলের মত ছুটতে লাগিল। তাহার গা দিয়া দর দর করিয়া রক্ত পড়িতেছে, মুখ দিয়া ফেনা ঝরিতেছে, চোখ দিয়া যেন আগুন বাহির হইতেছে! মাঝেমাঝে দাঁড়াইয়া, পায়ে মাটি খোঁড়ে আর ভয়ানক গর্জন করে।

 তারপর একটি ছোট গণ্ডার আনা হইল। সে তামাসার জায়গায় এক পাশে দাঁড়াইয়া আড় চোখে মহিষকে দেখিতে লাগিল, কিন্তু কিছুমাত্র ব্যস্ত হইল না। মহিষটা মাঝখানে দাঁড়াইয়া ছিল। সে সেখান হইতে শিং নীচু করিয়া গণ্ডারের দিকে ছুটিল। মহিষ কাছে আসিবামাত্র গণ্ডার পাশ কাটিয়া তাহাকে এড়াইয়া গেল, আর তাহার নিজের খড়গ দিয়া মহিষকে গুঁতাইয়া দিল। গুতা মহিষের গায় ভাল করিয়া লাগিল নাখালি একটা লম্বা আঁচড় পড়িল। এতক্ষণে গণ্ডারটা রাগে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করিতেছে, তাহার চোখদুটি যেন জ্বলিতেছে! মহিষ এতক্ষণে আবার ফিরিয়া আসিয়া গণ্ডারের কাধে এক গুঁতা লাগাইল, কিন্তু গণ্ডারের চামড়া এমন শক্ত, যে সে গুঁতায় তাহার বিশেষ কিছুই হইল না। গুঁতা খাইয়াই গণ্ডার তৎক্ষণাৎ মহিষের পাজরার ভিতরে তাহার খড়গ ঢুকাইয়া দিল, তারপর তাহাকে খড়েগ তুলিয়া খানিক দূরে ছুঁড়িয়া ফেলিল। মহিষও মাটিতে পড়িয়া তখনই মারা গেল।

 শেষে একটা প্রকাণ্ড ভালুক আর তিনটা বুনো কুকুরের যুদ্ধ। বেশ গভীর অথচ মুখ লম্ব চওড়া একটা গর্তের মতন স্থানের মাঝখানে একটা থাম পোঁতা আছে। ভালুকটা সেই থামের আগায় চড়িতে ভারি ব্যস্ত। এমন সময় কুকুরগুলিকে ভিতরে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। ভালুককে থামের উপরে দেখিয়াই কুকুরগুলি ভয়ানক ঘেউ ঘেউ আরম্ভ করিল। শেষে অনেক কষ্টে গর্তের এককোণে গিয়া কুকুরগুলিকে সামনে করিয়া বসিয়া, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইল। একটা কুকুর তাহার গলা কামড়াইয়া ধরিল। সে দুহাতে চাপিয়া কুকুরটাকে মারিয়া ফেলিল। কুকুর মরিল, কিন্তু কামড় ছাড়িল না। ততক্ষণে আর দুটা কুকুর আসিয়া তাহাকে কামড়াইয়া ধরিল। প্রথম কুকুরটা কখন মরিয়া গিয়াছে; কিন্তু ভালুক সেই যে কামড়াইয়া ছিঁড়িয়া ফেলিতেছে। বেচারা নাকাল হইয়া শেষটা আবার চ্যাঁচাইতে লাগিল।

 শেষে আর উপায় না দেখিয়া ভালুক মাথা গুঁজিয়া উপুড় হইয়া পড়িয়া রহিল। কুকুরগুলি তাহার পিঠে কামড়াইয়া বিশেষ কিছু করিতে পারিল না—সেখানকার চামড়াও মজবুত আর লোমগুলিও লম্বা লম্বা সুতরাং কামড়াইবার সুবিধা হয় না। যাহা হউক যতক্ষণ তাহাদের কিছুমাত্র দম ছিল, ততক্ষণ তাহারা ভালুককে ছাড়ে নাই। শেষে যখন একেবারেই হাঁপাইয়া পড়িল, তখন তাহাদিগকে লইয়া যাওয়া হইল। ভালুকও “বড্ড বেঁচে গিয়াছি” মনে করিয়া মরা কুকুরটাকে ফেলিয়া দিয়া, আবার তাহার থামে চড়িতে ব্যস্ত হইল।


ধূমকেতু

 যাত্রায় যেমন সং, আকাশে তেমনি ধূমকেতু। আকাশের গ্রহ নক্ষত্রগুলির সকলেরই এক একটা নিয়মিত কাজ আছে; কিন্তু ধূমকেতুগুলিকে দেখিলে হঠাৎ মনে হইতে পারে, যে


উপেন্দ্র-১১৩