পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯০৭

 পক্ষান্তরে বাঘেরও মহত্ত্বের কথা শুনা গিয়াছে। একবার একটা বাঘ শিকারীর তাড়া খাইয়া পলাইতেছিল, এমন সময় একটি ছোট ছেলে গাছের উপর হইতে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া বলিল, যে ঐ বাঘ। ছেলেটি যে গাছের ডালে বসিয়াছিল, তাহ বেশী উচুতে ছিল না। বাঘ এক লাফে সেখানে উঠিয়া, একেবারে সেই ছেলের মাথাটা কামড়াইয়া ধরিল;কিন্তু এমনি আলগোছে ধরিল, যে দাঁত বসিল না। অর্থাৎ যেমন করিয়া তাহারা বাচ্ছ এক স্থান হইতে অন্য স্থানে লইয়া যায়, সেইরূপ করিয়া ধরিল। এইরূপে তাহাকে গাছ হইতে নামাইয়া রাখিয়া বাঘ চলিয়া গেল। ছেলেটি ভয়ে অজ্ঞান হইয়া গিয়াছিল, কিন্তু তাহার একটুও লাগে নাই। জ্ঞান হইলে, সে খালি বলিয়াছিল, “উঃ! কি গন্ধ।” এই গল্পটা শুনিলে কি এরূপ মনে হয় না, যে অত ছোট ছেলেকে কঠিন আঘাত দিতে বাঘের ইচ্ছা হয় নাই।

 যাহা হউক বিড়াল জাতীয়দের মধ্যে বাঘ আর সিংহ এই দুজনেই শ্রেষ্ঠ। এ দুজনের যিনিই রাজা হউক, তাহাতে ফলের বড় ইতর বিশেষ দেখি না।

 আজকাল আমাদের দেশে সিংহ বড় একটা দেখিতে পাওয়া যায় না। প্রাচীন কবিদিগের বর্ণনা দেখিলে বোধহয়, যেন আগে ভারতবর্ষের অনেক স্থানেই সিংহ ছিল। কিন্তু এক গুজরাট ভিন্ন অন্যান্য স্থান হইতে সিংহ অনেকদিন হইতেই লোপ পাইয়াছে। গুজরাটেও যে অব বেশী দিন সিংহ পাওয়া যাইবে, তাহা বোধহয় না। সিংহের আদত জায়গা এখন আফ্রিকা। সেখানকার বার্বেরী দেশীয় সিংহই সকলের প্রধান। তাহার চেহারা যেমন দেখিতে জমকালো, গায় বলও তেমনি প্রচণ্ড। আমেরিকায় সিংহ বলিয়া একটা জন্তু আছে। সে বাস্তবিক সিংহ নহে। রংটা অনেকটা সিংহের মতন বটে, কিন্তু আকৃতি সিংহের চাইতে অনেক ছোট, আর তাহার কেশর নাই। এই জন্তুর আসল নাম “পুমা”। পুমা খুব সাহসী, আর বড় প্রতিহিংসা-প্রিয়।

 আমেরিকার সিংহ যেমন সিংহ নহে, তেমনি আমেরিকার বাঘও ঠিক বাঘ নহে। এই জন্তুর নাম “জ্যাগুযার"। ইহার পরাক্রম খুব বেশী, তাই সেখানকার লোকেরা অনেক সময় ইহাকে টাইগার বলে। যাহার গায় লম্বা লম্বা ডোর সেই বাঘই টাইগার। জ্যাগুয়ারের গায় চক্র থাকে।

 এতক্ষণ বাঘের কথা বলিয়া দু-একটা বাঘের গল্প না বলিয়া শেষ করা ভাল দেখায় না।

 দুই বন্ধুর বড়ই মাছ ধরিবার সখ। কোথায় একটা খালের ধারে মাছ ধরিবার ভারি সুবিধা; তাই দুজনায় পরামর্শ করিল, যে পরদিন ভোরে সেখানে মাছ ধরিতে যাইবে। ভোরবেলা একজন খালের ধারে গিয়া দেখিল, যে সেখানে আর একজন ইতিপূর্বেই আসিয়াছে। এই ব্যক্তি অবশ্য তাহার বন্ধুই হইবে, এইরূপ মনে করিয়া সে তাহার কানের কাছে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কটা ধরলে?” তখনও ভাল করিয়া ফরসা হয় নাই, আর লোকটির দৃষ্টিশক্তিও বোধহয় একটু ক্ষীণ ছিল। সুতরাং সে বুঝিতে পারে নাই, যে ওটা তাহার বন্ধু নয়, বাঘ আসিয়া আছে। বাঘও মাছ খাইতে নিতান্তই ব্যস্ত ছিল, সুতরাং পিছন হইতে কে আসিতেছে, তাহার খবর রাখে নাই। আর তাহার ওরূপ কানের কাছে গিয়া বোধহয় ইতিপূর্বে কেহ কোন কথা বলে নাই। সুতরাং সে ভারি চমকাইয়া গেল, আর থতমত খাইয়া যাওয়াতে, সেই লোকটিকে দু-একটা আঁচড় দিয়াই ছুটয়া পলাইল। তদবধি ঐ ব্যক্তিকে দেখিতে পাইলেই পাড়ার ছেলেরা পিছন হইতে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিত, ‘কটা ধরলে?'