পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৯২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এসব তো গেল আলোকের কথা। অন্ধকারের সময় সমুদ্র দেখিতে কেমন সুন্দর, এ কথা শুনিয়া কেহ হাসিবেন না। খুব অন্ধকার রাত্রিতে সমুদ্রের জলে একপ্রকার আলোক দেখা যায়। অবশ্য উহা হইতে প্রদীপের আলোর ন্যায় আলো বাহির হয় না; খালি জলে একরকম ঝিকিমিকি মাত্র দেখা যায়। ঢেউ ভাঙ্গিবার সময় মনে হয় অসংখ্য জোনাকী জলের উপর ছড়াইয়া পড়িতেছে। আমি দেখিতে পাই নাই, কিন্তু যাহারা দেখিয়াছেন তাহারা বলেন যে, তাহা ভারি সুন্দর। সমুদ্রের জলে নাকি একরকম জীবাণু আছে, তাহা নাড়া পাইলে উজ্জ্বল হইয়া উঠে। এই জীবাণু ঐরূপ আলোকের কারণ।

 জীবাণুর কথায় জীবজন্তুর কথা সহজেই মনে হইতে পারে; সুতরাং এখন তাহার কথা বলাই সঙ্গত মনে হইতেছে।

 সমুদ্রের জীব বলিলেই সকলের আগে আমার কাঁকড়ার কথা মনে হয়। তারপর শামুক ঝিনুকের কথা, তারপর মাছের কথা ও যাহারা মাছ ধরে তাহদের কথা।

 কাঁকড়া আর শামুক ঝিনুকের কথা আগে মনে হইবার কারণ এই যে, সমুদ্রের ধারে গেলেই ঐগুলিকে দেখিতে পাওয়া যায়। সমুদ্রের ধারে বেড়াইবার অর্ধেক আমোদ উহাদিগকে লইয়া। দুঃখের বিষয় অন্য অনেক স্থানে যেমন নানরকমের সুন্দর-সুন্দর শামুক ঝিনুক পাওয়া যায়, পুরীতে তেমন নাই। তথাপি যাহা আছে তাহার মতন সুন্দর শামুক ঝিনুক আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। সে সকল ঝিনুকের এমন সুন্দর রঙ আর এমন সুন্দর গড়ন যে দেখিলেই কুড়াইতে ইচ্ছা করে। আমরা অনেক ঝিনুক কুড়াইয়াছিলাম।

 কাঁকড়ার কথা আর কি বলিব! এমন সরেস জন্তু আর যে খুব বেশি আছে এ কথা আমি বিশ্বাস করিতে প্রস্তুত নহি। সমুদ্রের ধারের বালিতে প্রথমে তাহদের পায়ের দাগ দেখিতে পাই। একটা ছোট গোলার গায় লম্বা-লম্বা কাটা বিধাইয়া সেই কাটাসুদ্ধ গোলাটাকে গড়াইয়া দিলে যেমন দাগ পড়িতে পারে, সেইরূপ দাগ। একটা দুটা নয়, অসংখ্য। যেদিকে চাও খালি ঐরূপ দাগ। আমি তো অবাক হইয়া গেলাম। এরূপ অদ্ভুত চিহ্ন কিসের হইতে পারে, তাহা আমার মাথায়ই আসিল না। খানিক অগ্রসর হইয়া দেখিলাম যে, এইরূপ এক সার দাগ একটা গর্তের কাছে গিয়া উপস্থিত হইয়াছে, আর গর্তের মালিকও দরজায় বসিয়া আছে। কিন্তু আমাকে দেখিয়া সে বেচারা এত তাড়াতাডি গর্তের ভিতর ঢুকিয়া গেল যে, আমি ভালো করিয়া তাহার পরিচয়ই লইতে পারিলাম না।

 আমি প্রথমে মনে করিয়াছিলাম বুঝি মাকড়সা। আকারে একটা মাঝারি মাকড়সার চাইতে বেশি বড় হইবে না, আর রঙটাও কতকটা সেই রকমের। সে যে কাকড়া, তাহা আমার আদবেই মনে হয় নাই, কারণ কাকড়া এমন ছুটিতে পারে তাহা আমি জানিতাম না। যাহা হউক আমার ভ্রম দূর হইতে বেশি সময় লাগিল না। কারণ উছার আশেপাশে ঐরাপ আরো অনেক গর্ত ছিল, আর প্রায় অনেক গর্তের দরজায় এক একটি ছোট্ট কাকড়াও বসিয়াছিল। উহারা যে কিরূপ বিস্ময় এবং কৌতুহলের সহিত আমাকে দেখিতেছিল তাহা না দেখিলে বুঝিতে পরিবে না। কাকড়ার মুখশ্রীতে বিস্ময় কৌতুহল প্রভৃতি ভাব প্রকাশ পাওয়া সম্ভব নহে, এ কথা তোমরা বলিবার পূর্বেই আমি স্বীকার করিতেছি। তথাপি ঐ সময়ে উহাদের নিতান্তই কৌতুহল হইয়াছিল, এ কথা আমি নিশ্চয় বলিতে পারি। উহাদের অনেকেই আমাকে দেখিবার জন্য গর্ত ছাড়িয়া খানিক অগ্রসর হইয়া আসিয়াছিল, আর আমি