পাতা:কথা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
কথা

ক্ষীণ চন্দ্র অস্ত গেল—অরণ্য নীরব
শত শত বিহঙ্গের সুপ্তি বহি শিরে
দাঁড়ায়ে রহিল স্তব্ধ। অতি ধীরে ধীরে
রমণীর কটি হতে প্রিয়বাহুডাের
শিথিল পড়িল খসে; বিচ্ছেদ কঠোর
নিঃশব্দে বসিল দোঁহা মাঝে; বাক্যহীন
বজ্রসেন চেয়ে রহে আড়ষ্ট কঠিন
পাষাণ পুত্তলি; মাথা রাখি তার পায়ে
ছিন্নলতাসম শ্যামা পড়িল লুটায়ে
আলিঙ্গনচ্যুতা; মসীকৃষ্ণ নদীনীরে
তীরের তিমিরপুঞ্জ ঘনাইল ধীরে।


সহসা যুবার জানু সবলে বাঁধিয়া
বাহুপাশে -আর্ত্তনারী উঠিল কাঁদিয়া
অশ্রুহারা শুককণ্ঠে—ক্ষমা কর নাথ,
এ পাপের যাহা দণ্ড সে অভিসম্পাত
হােক্ বিধাতার হাতে নিদারুণতর-
তােমা লাগি যা করেছি তুমি ক্ষমা কর।
চরণ কাড়িয়া লয়ে চাহি তার পানে
বজ্রসেন বলি উঠে—আমার এ প্রাণে
তােমার কি কাজ ছিল! এ জন্মের লাগি
তাের পাপ মূল্যে কেনা মহাপাপভাগী
এ জীবন করিলি ধিক্কৃত। কলঙ্কিনী,
ধিক্ এ নিশ্বাস মাের তাের কাছে ঋণী!