পাতা:কথামালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (সচিত্র).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
কথামালা

অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন; এজন্য কোনও উত্তর দিলেন। চিকিৎসক বারংবার চাহিয়াও পুরস্কার না পাইয়া, বৃদ্ধার নামে বিচারালয়ে অভিযোগ করিলেন। বৃদ্ধা বিচারকদিগের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন, এবং চিকিৎসককে স্পষ্ট বাক্যে চোর না বলিয়া কৌশল করিয়া কহিলেন, কবিরাজ মহাশয় যাহা বলিতেছেন, তাহা যথার্থ বটে। আমি অঙ্গীকার করিয়াছিলাম, যদি আমার চক্ষু পূর্ব্ববৎ হয়, কোনও দোষ না থাকে, তবে উঁহাকে পুরস্কার দিব। উনি বলিতেছেন, আমার চক্ষু নির্দ্দোষ হইয়াছে। কিন্তু আমি যেরূপ দেখিতেছি, তাহাতে আমার চক্ষু নির্দ্দোষ হয় নাই। কারণ, যখন আমার চক্ষুর দোষ জন্মে নাই, আমার গৃহে যে নানাবিধ দ্রব্য ছিল, সে সমস্ত দেখিতে পাইতাম। পরে চক্ষুর দোষ জন্মিলে, সে সকল দেখিতে পাই নাই; এখনও সে সকল দেখিতে পাইতেছি না। ইহাতে উঁহার চিকিৎসায় আমার চক্ষু নির্দ্দোষ হইয়াছে, আমার সেরূপ বোধ হইতেছে না। এক্ষণে আপনাদের বিচারে যাহা কর্ত্তব্য হয় করুন।

 বিচারকেরা বৃদ্ধার উক্ত বাক্যের মর্ম্ম বুঝিতে পারিয়া, হাস্যমুখে তাঁহাকে বিদায় দিলেন, এবং যথোচিত তিরস্কার করিয়া চিকিৎসককে বিচারালয় হইতে চলিয়া যাইতে বলিলেন।