পাতা:কমলা - আশুতোষ ভট্টাচার্য্য.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কমলা আলোকে মলিন ছিন্ন শয্যায় নিদ্রিত পুত্ৰ কন্যার ক্ষুৎক্ষাম দুইখানি মুখের দিকে চাহিয়া ভাবিতে লাগিল,-“যাদের ভাত নেই তাদের আবার মানসম্রামই বা কি আর লজ্জাসরমই বা কি ? রাতটে পোহলে আমি এদের হাত ধ’রে ভিন্ন গ্রামে গিয়ে ভিক্ষে ক’রব। এরা যে আমার চোখের সামনে খেতে না পেয়ে শুকিয়ে শুকিয়ে ম’রবে, তা কি ক’রে দেখাব ? দুভিক্ষের দিনে মানুষ খেতে না পেয়ে শুকিয়ে মরে শুনেছি ; তাতে এত দুঃখ হয় কি ? দেশে সবার ঘরেই তাই । এ ত তা নয় —সবার বাড়ীতেই মরাইভরা ধান, জালাভেরা চাল, হঁাড়ীভরা ভাত, হাসিমাখা মুখ ! শুধু আমাদের এই একখানি বাড়ীতেই দুভিক্ষ ! এ দুৰ্ভিক্ষ ত অজন্মার জন্যে আসেনি ; এ যে তিনি ইচ্ছে ক’রে আপনি ডেকে এনেছেন! ভগবান! ঋতদিনে তঁর চোখ ফুটুবে ?” আবার তাহার নয়নদ্বয় আশ্রণপূর্ণ হইয়া আসিল । সে অশ্রুপুর্ণনেত্ৰে উপরে চাহিয়া বাষ্পজড়িত কম্পিত্যকণ্ঠে বলিল,-“আর যাদের কোন গতি নেই, কেউ দেখবার নেই, তুমি যে তাদের দেখা ? অগতির গতি - অনাথের নাথ !-দুঃখীর সহায় । কোথায় তুমি ? তুমিও কি আমাদের দিকে ফিরে চাইবে না ?”—তাহার মুখ দিয়া আর কথা সরিল না, শুধু অনিমেষ নয়নপ্রান্ত হইতে অবিরল অশ্রু ঝরিতে লাগিল । তরঙ্গিণী প্ৰভাতে ভিক্ষায় বাহির হইবার সঙ্কল্প দৃঢ় করিয়া উপবাসক্ষিপ্লদেহে শয়ন করিয়াছে মাত্র, এমন সময়ে দ্বারে মৃদু করাঘাত করিয়া অনুচ্চকণ্ঠে কে ডাকিল,-“বড় বউঠাকুরুণ!” কণ্ঠস্বরে তরঙ্গিণী বুঝিল, বিরাজ ডাকিতেছে। মানুষ পরের কাছে গিয়া ভিক্ষা করিতে পারে, কিন্তু আপনার জনের নিকটে অভাব জানাইতে লজ্জায় মরিয়া যায় কেন ? তরঙ্গিণীর ভাবনা হইল-বিরাজ কি তাহাদের উপোষের কথা শুনিয়া 88