রাখার যাতনাটাই বেশী হইয়া উঠিল। সেই সময়ে একদিন তরঙ্গিণী তাহার কাছে বসিয়া হাসিতে হাসিতে বলিল, “তুমি মনের ভেতর কিছু একটা চেপে রেখেছি, আমাকে বলবে বলবে কর, কিন্তু বল না। ;-বলবে न ?” হীরালাল সেদিন আর সেকথা। চাপিয়া রাখিতে পারিল না । কমলার অজ্ঞাতবাস ও অপবাদ সম্বন্ধে সে যাহা যাহা জানিত, তরঙ্গিণীকে বলিয়া ফেলিল । স্তব্ধভাবে বসিয়া সমস্ত শুনিয়া তরঙ্গিণী অশ্রুভারাক্রান্তনেত্ৰে হীরালালের দিকে যে ভাবে চাহিয়া রহিল তাহা অনিৰ্ব্বচনীয় ! তাহার সে দৃষ্টি যেন আহত মৰ্ম্মের গভীর মৌন আৰ্ত্তনাদ ও নিৰ্ব্বাক ভৎসনা ! তাহাতে ভালবাসা আছে, ঘুণা আছে, করুণা আছে, রোগও আছে, এবং রাগটাই যেন কিছু বেশী বেশী ; কিন্তু কাহার উপরে সে রাগ করিবে ? অপরাধী আপনার স্বামী ! তরঙ্গ যেমন সবেগে শৈলতটে আঘাত করিয়া শৈলের কিছুই করিতে পারে না, প্ৰতিহত হইয়া সাণরের হৃদয়ই অধিকতর চঞ্চল ও আকুল করিয়া তুলে, তরঙ্গিণীর রাগও তেমনি হীরালালের কিছু করিতে না পারিয়া তাহার নিজের হৃদয়কেই বিধ্বস্ত ও আলোড়িত করিয়া তুলিল। তাহার হৃদয় ঘন ঘন স্ফীত হইতে লাগিল এবং হীরালালকে কোন কথা বলিতে না পারিয়া সে বিহ্বল হৃদয়ে কঁাদিতে আরম্ভ করিল। আর একদিনওঁ তরঙ্গিণী এমনই করিয়া এতই কঁাদিয়াছিল,-যেদিন হীরালালকে সে কিছুতেই কমলার বাপের বাড়ী যাওয়ার সম্বন্ধে সত্য কথা বলাইতে পারে নাই। সেদিন হীবালাল তাহার কান্না দেখিয়া শুধু হাসিয়াছিল আর পরিহাস করিয়াছিল, আজ সেও কঁাদিয়া ফেলিল । [ Swጓ